সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১২ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: পদত্যাগ করতে রাজি জেলেনস্কি      বড় রদবদলেও গতি নেই প্রশাসনে      জার্মানির নির্বাচনে জয়ী ফ্রেডরিক মারৎজের দল      স্থানীয় নির্বাচনে সুযোগ খুঁজবে আওয়ামী লীগ       যারা দেশকে অস্থিতিশীল করছে, তাদের ঘুম হারাম করে দেব : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      পদত্যাগের গুঞ্জনে যা বললেন নাহিদ ইসলাম      এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি বা এর ওপরে রাখতে পরিপত্র জারি      
খোলাকাগজ স্পেশাল
করপোরেট সিন্ডিকেটে আটকা সয়াবিন তেল
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫২ এএম  (ভিজিটর : ১২৩)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

সামনে রমজান মাস। মুসলিম উম্মাহর সিয়াম সাধনার এ মাসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফা করার লোভ পুরোনো। তাই রমজান মাস এলেই সংকট তৈরি হয় নানা নিত্যপণ্যের। আর বেশিরভাগ সময় কৃত্রিমভাবে এ সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা। বর্তমান সময়ে করপোরেট ব্যবসায়ীরাই এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা।

এবারো রমজান আসার আগেই তৎপর হয়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট। এরই মধ্যে বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কার্যকর না হওয়ায় তেল কোম্পানিগুলো জোটবদ্ধ হয়ে একই সময় তেল সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে খুচরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। এ সুযোগে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের গায়ের মূল্য ১৭৫ টাকা মুছে ১৯০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। খোলা সয়াবিনের দর গিয়ে ঠেকেছে ২০০ টাকায়। গত নভেম্বর মাসে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তখন লিটার প্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। 

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি থেকে তেল পাওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা দিলেও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তাও নিতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে। আবার সেই তেল কিনতে সঙ্গে নির্ধারিত অন্য পণ্যও নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে কোম্পানিগুলো।

এ সংকট থেকে অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ জানিয়েছে যে, কোম্পানিগুলো ইচ্ছা করেই নিয়মিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি করার নানা সুযোগ খোঁজে। সরকার যদি কঠোর নজরদারি রাখতে না পারে তাহলে রোজার মাসে বাজারে স্থিতিশীল থাকবে না।
রাজধানীর নয়াবাজরের মুদি বিক্রেতা তুহিন বলেন, রোজায় আরেক দফা দাম বাড়াতে ইচ্ছা করে কোম্পানিগুলো সংকট তৈরি করে রেখেছে। 

কোম্পানিগুলোর ডিলাররা পরিচিত দোকান ছাড়া সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। তিনি বলেন, ২০ কার্টনের চাহিদা দিলে সরবরাহ করছে ৩-৪ কার্টন। এ ছাড়া তেলের সঙ্গে ৬-১০টি পণ্য নিতে বাধ্য করছে। আর ওইসব পণ্য না নিলে তেল সরবরাহ করছে না। তিনি জানান, ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো জোটবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে বাজারে তেল সরবরাহ করছে না।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের মুদি দোকানদার ইমন (ছদ্মনাম) বলেন, রোজার আগে সরকারিভাবে ফের সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে ছয় কোম্পানি জোটবদ্ধ হয়েছে। কোম্পানিগুলো তাদের ডিলারদের মাধ্যমে খুচরা বাজারে একসঙ্গে নয়, কয়েকদিন পরপর পর্যায়ক্রমে তেল সরবরাহ করছে। তিনি জানান, কোম্পানিগুলো নানাভাবে বিক্রেতাদেরও চাপে ফেলে তেল বিক্রি করছে। তেল পেতে হলে এসব কোম্পানির ৮-১০টি পণ্য নিতে বাধ্য করছে। সেক্ষেত্রে রূপচাঁদা তেল পেতে চাইলে ব্র্যান্ডটির ছোট-বড় সব সাইজের সরিষার তেল নিতে হচ্ছে। তীর সয়াবিনের সঙ্গে লবণ ও সব ধরনের গুঁড়া মসলা নিতে হচ্ছে। পুষ্টি কোম্পানির তেল নিতে চাইলে ওই ব্র্যান্ডের আটা-ময়দা নিতে হচ্ছে। ডিলারদের কাছ থেকে সান ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল পেতে হলে ওই ব্র্যান্ডের লবণ নিতে হচ্ছে। কিন্তু সয়াবিন তেল ভোক্তার কাছে বিক্রির সময় এ বাড়তি পণ্য কিনতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই দোকানিরা লোকসান থেকে মুক্তি পেতে বোতলজাত তেলের বোতলের গায়ের মূল্য ১৭৫ টাকা মুছে ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি করছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম এলাকার একটি হালিশহর। হালিশহর বড়পোল এলাকার মুদি দোকানি খন্দকার এন্টারপ্রাইজ। ওই দোকানে গিয়ে পাওয়া যায় তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের সয়াবিন তেল। ওই তেলের বোতলের সঙ্গে একই গ্রুপের এক কেজি চিনিগুঁড়া চালের প্যাকেট স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো। এ দোকানের কর্মচারী রাসেল বলেন, ‘সয়াবিন তেল বাজারে নেই। আমাদের ৫ লিটারের চার বোতল সয়াবিন তেলের একটি কার্টনের সঙ্গে ডিলার ১০ কেজি চিনিগুঁড়া চাল দিচ্ছেন। এমনিতেই সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের নিয়মিত অনেক গ্রাহক আছেন। তাদের জন্যই সয়াবিন তেল রাখতে হয়। ৫ লিটার সয়াবিন তেল ও এক কেজি চিনিগুঁড়া চালসহ এক হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৫০ টাকা তেলের দাম, ১৫০ টাকা চালের দাম।’

পাশের মেসার্স বেলাল স্টোরের মালিক মো. বেলাল বলেন, ‘রূপচাঁদা, পুষ্টি, তীর সব কোম্পানি চাল ছাড়া তেল (সয়াবিন) দিচ্ছে না। আমরাও বাধ্য হয়ে চালসহ তেল কিনছি। চাল না নিলে ডিলার থেকে আমাদের তেল দেওয়া হয় না। ৫ লিটার তেল কোম্পানির ডিলার থেকে আমরা ৮৪২ টাকায় কিনি, ৮৫০ টাকায় বিক্রি করি। সঙ্গে বাধ্য হয়েই এক কেজি চিনিগুঁড়া চাল ১৫০ টাকা মিলে এক হাজার টাকায় তেল ও চাল বিক্রি করছি।’

নগরীর আরেক ব্যস্ততম এলাকা কাজীর দেউড়ি। ওই এলাকার মুদি দোকানি খান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ম্যানেজার মো. কায়সার বলেন, ‘প্রায় সব কোম্পানিই ডিলারদের শর্ত দিয়েছে, তেলের সঙ্গে স্লো আইটেম নিতে হবে। কোম্পানিভেদে প্রত্যেকের অন্য প্রোডাক্ট চাল, চা-পাতা, সরিষার তেল, মুড়ি, পানি রয়েছে। তাদের কাছ থেকে তেল নিতে হলে এসব স্লো আইটেম নিতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘৫ কার্টন তেল নিতে হলে চিনিগুঁড়া চালের সঙ্গে সরিষার তেল নিতে হবে, না হয় চা-পাতা। আমাদের নিয়মিত গ্রাহকের স্বার্থে বাধ্য হয়েই ডিলারদের কাছ থেকে স্লো আইটেমসহ তেল নিতে হচ্ছে। 

আমরাও বাধ্য হয়েই গ্রাহকের কাছে এসব আইটেম দিয়েই তেল বিক্রি করছি। অনেক সময়ে তেলের বোতলের চেয়ে স্লো আইটেম বেশি দিচ্ছে ডিলাররা।’

একসময়ে আমাদের দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে রান্নার জনপ্রিয় বড় অনুষঙ্গ ছিল সরিষার তেল। স্থানীয় পর্যায়ে সরিষা মাড়াই করে তেল পাওয়া যেত। সময়ের ব্যবধানে বিগত তিন দশকে সরিষা তেলের আধিপত্যে ভাগ বসায় আমদানিনির্ভর সয়াবিন তেল। বর্তমানে দেশে হাতেগোনা কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে সয়াবিন তেলের ব্যবসা।

ভোজ্যতেল বাদেও এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠানের রয়েছে চাল, ডালসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার খোলাবাজারে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তেলের সঙ্গে অন্য ভোগ্যপণ্য বিক্রির কৌশলে প্রতিনিয়ত ঠকছেন ভোক্তারা।
বর্তমানে বাজারে শিল্প গ্রুপ সিটি গ্রুপের ‘তীর’, মেঘনা গ্রুপের ‘ফ্রেশ’, টিকে গ্রুপের ‘পুষ্টি’, আবুল খায়ের গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্মাইল ফুড প্রোডাক্টসের ‘স্টারশিপ’, বসুন্ধরা গ্রুপের ‘বসুন্ধরা’ এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানির ‘রূপচাঁদা’ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রয়েছে।

রমজান সামনে রেখে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ট্রড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদার পরিমাণ ৩ লাখ টন। দেশে ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ৫ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৮ টন। এ ছাড়া দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা হয় ২ লাখ ৫০ হাজার টন। আর আমদানি পর্যায়ে এখনো পাইপলাইনে আছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৫৬৫ টন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য নিম্ন্মুখী হওয়ায় স্থানীয় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সংকটের কোনো কারণ নেই। আমরা বিগত বছরে দেখেছি দেশে ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি সয়াবিনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পর সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। সরকারিভাবে দাম বাড়ালেও তারা বাজারে পর্যাপ্ত তেলের সরবরাহ করে না। রোজা ঘিরে তারা এমন কারসাজি করে। এদিকে রোজায় ভোজ্যতেলের সরবরাহে যাতে কোনো ধরনের ঘাটতি না হয়, সেজন্য ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। সম্প্রতি তেলের পরিশোধন কারখানা পরিদর্শনকালে তিনি এ অনুরোধ করেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, বাজারে অধিদফতরের পক্ষ থেকে তদারকি চলমান আছে। মূল্য নিয়ে কারসাজিতে অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।

কেকে/এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  করপোরেট সিন্ডিকেট   সয়াবিন তেল  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

পদত্যাগ করতে রাজি জেলেনস্কি
বড় রদবদলেও গতি নেই প্রশাসনে
বাবিসাস অ্যাওয়ার্ড পেলেন অভিনেতা এনায়েত উল্যাহ সৈয়দ
কুবিতে মাদক সেবনরত অবস্থায় শিক্ষার্থীসহ আটক ৩
জার্মানির নির্বাচনে জয়ী ফ্রেডরিক মারৎজের দল

সর্বাধিক পঠিত

সায়ান রিসোর্টের আড়ালে নারী ও মাদক ব্যবসা
পুত্র সেজে ভাতিজা তোলেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, জড়িত ইউপি সচিব
ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি মীর নেওয়াজ
আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে পাবিপ্রবির ক্রিকেট ফাইনাল বন্ধ
শ্রীমঙ্গলে সাতপীরের ভুয়া মাজার নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝