কখনো কি আর ফিরে পাব আমার স্বামীকে? আমার তিন সন্তান চিরজীবনের জন্য এতিম হয়ে গেল, বাস চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন আমার স্বামী, ৫ আগস্ট তার ডিউটি ছিল না, তিনি বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। সেদিন দুপুরে রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি দেখতে। সেখানেই পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি। গুলিতে তার মাথার মগজ আলাদা হয়ে পড়ে ছিল। তার কবরে আলাদা পলিথিনে মগজসহ দাফন করা হয়েছে।
কথাগুলো বলছিলেন ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত বাসচালক আলমগীর হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। শহিদ আলমগীর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের কাজিরখিল গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মো. শাহজাহান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকার উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকায় পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।
এদিকে আলমগীরের নিহত হওয়ার এক মাস না যেতেই স্ত্রীর কোলজুড়ে আসে বহুল আকাঙিক্ষত কন্যাসন্তান। কিন্তু মেয়ের চোখ জুড়ানো হাসি দেখার সৌভাগ্য হয়নি শহিদ আলমগীরের। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রী হোসেনে আরা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, দুই ছেলের পর তার ইচ্ছে ছিল একটি মেয়ের বাবা হওয়ার। প্রায়ই বলতেন, আল্লাহ তো তোমাকে দুটি ছেলে দিয়েছেন, আমাকে যদি একটি মেয়ে দিতেন। ২৯ সেপ্টেম্বর আমি কন্যাসন্তানের জন্ম দিলাম। কিন্তু তার আর মেয়ের মুখে বাবা ডাক শোনা হলো না।
এক কন্যা ছাড়াও আলমগীরের দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। আলমগীর নিহত হওয়ার সময় তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ছিলেন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আলমগীর হোসেন ঢাকায় বাস চালিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। তবে তার মৃত্যুতে এখন চোখে অন্ধকার দেখছে পরিবার। একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে এখন দিশাহারা পুরো পরিবার।
দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় স্ত্রী। এ বিষয়ে স্ত্রী হোসনে আরা বেগম বলেন, এগুলো ভাবতে গেলে চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। আল্লাহ জানেন আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে।
এলাকাবাসী জানান, আলমগীর খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কখনো এলাকার কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। আলমগীরের মৃত্যুর প্রায় ৫ মাস হতে চলেছে। স্ত্রীর কোলে মাত্র কয়েক মাস বয়সের কন্যাসন্তান। সন্তানদের কথা চিন্তা করে প্রায়ই অঝোরে কাঁদছেন আলমগীরের স্ত্রী। এ কারণে এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আকতার জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা ইতোমধ্যে আলমগীর হোসেনের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা এলে আলমগীরের পরিবার পাবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আমি যোগদানের পরপরই বিভিন্ন উপজেলায় শহিদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আলমগীর হোসেনের বাড়িতেও গিয়েছি। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। ৫ আগস্ট আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা করে তাদের পরিবারকে যথাযথ সহযোগিতা করা হবে।
কেকে/এএস