দিন যায়, মাস যায় খবর নেয়না কেউই। প্রতি বছর শীতকাল আসে আর যায়। কিন্তু শীতের পিঠা পুলি কপালে জোটে না তাদের। শীতকালে গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়িতেই পিঠা পুলির ধূম পড়ে। হতদরিদ্র, অসহায় ছিন্নমূল এসব মানুষেরা বঞ্চিত থাকেন পিঠার আস্বাদন থেকে। এই শীতে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে তাদের কথা ভেবে ব্যতিক্রমি পিঠা উৎসবের আয়োজন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম। এমন আয়োজনে পিঠা পুলি খেয়ে উচ্ছসিত হতে দেখা গেছে তাদের। কেউ আবেগাপ্লুত হয়ে স্মৃতি চারণ করেছেন অতীত জীবনের।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালেউপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে তারুণ্যের মেলায় পৌর সদর এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০০ জন গরীব, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষকে রিতি মতো দাওয়াত করে নিয়ে এসে চার পদের পিঠা খাওয়ানো হয়। এসবের মধ্যে ছিল চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, ভাপা ও পুলি পিঠা।
উপজেলা পরিষদের ভিতরে তারুণ্যের মেলায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি পিঠার দোকান বসেছে। সেখানে প্লেটে করে নিয়ে গরম গরম পিঠা খাচ্ছেন তারা। মনে হচ্ছে আপন কোন পরম আত্মীয়ের আতিথয়তায় মুগ্ধ হয়ে বহু দিনের চির চেনা আচ্ছাদন নিচ্ছেন তারা। পূর্ণ তৃপ্তিসহকারে পিঠা খেয়ে এবারের শীতের আমেজকে যেন নতুন করে উপভোগ করলো তারা।
পিঠা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানাসহ উপজেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
পিঠা খেতে আসা ভ্যান চালক ইসাহাক আলী বলেন, বর্তমানে বাজার দরের যে অবস্থা তাতে নূন আনতে পান্তা ফুরায়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যে রোজগার হয় তা দিয়ে পরিবারের ভরনপোষন করানোয় দায় হয়ে গেছে। এবার বাড়িতে পিঠার আয়োজন করতে পারিনি। এভানে পেট ভরে পিঠা খেলাম। খুব ভাল লেগেছে।
এলাকায় ঘুরে ভিক্ষা করেন রাহেলা বেওয়া। তিনিও এ মেলায় পিঠা খেতে এসে বলেন, হাংকে খোজ খবর কেউ লেয়না বাবা। বহুদিন থিনি হাউস মতো পিঠা খাওনি। টিওনি স্যার আজ হাংকক দাওয়াত দিয়ে আনে পিঠা খিলাওছে বাবা। আল্লাহ তার ভাল করুক এই দোয়া করি বাবা।
স্থানীয় বাসিন্দা মীর রেজাউন্নবী বলেন, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে এমন আয়োজন সচরাচর চোখেনপড়ে না। তারা শীতকালে পিঠা খেতেও পারে না। তাদের কথা চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসনের এমন আয়োজন প্রসংশনীয়। আমরা চাই প্রতি বছর এমন আয়োজন অব্যহত থাকুক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, প্রতি বছর শীতকালের প্রতিটি বাড়িতেই কম বেশি পিঠার আয়োজন হয়ে থাকে। আমি লক্ষ্য করেছি এই উপজেলায় অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষরা এই পিঠার আয়োজন থেকে বঞ্চিত থাকে। পিঠা ক্রয় করে খাওয়ার মতো সামর্থ তাদের নেই। বিষয়টি আমার অন্তরে নারা দেয়। সেই থেকে তাদের জন্য আজকের এই আয়োজন। এটি করতে পেরে আসলেই খুব ভাল লাগছে। ভবিষ্যতেও এর ধারা অব্যহত রাখার চেষ্টার করবো।
কেকে/ এমএস