শষ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত জয়পুরহাটে কালাই উপজেলার চাষিরা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। কারণ কাঙ্খিত দাম পাচ্ছে না তারা। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবার উপজেলায় আলুর আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে তারা আলুর আবাদ করেছিল,তা পূরণ হচ্ছে না। বাজারে আলুর দাম কম।
এ দিকে আলুর হিমাগার মালিকরা আলু সংরক্ষণ চার্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আলু নিয়ে একপ্রকার বড় বিপদে পড়েছে উপজেলার কৃষকরা। এভাবে চললে আলু উৎপাদনে কৃষকরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। লাভ তো দুরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলে লোকসানে পড়ে কৃষকের কপালে কষ্টের ভাঁজ পড়েছে। আলু উৎপাদনে শীর্ষে কালাই উপজেলা। উপজেলার বর্তমানে মাঠজুড়ে আলুর আবাদ। দেখে মনে হয় সবুজের গালিচা। উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এনায়েত মওলানা সবুজ বলেন,এ ইউনিয়নে এবারে ব্যাপক আলুর আবাদ হয়েছে। কিন্তু নায্য দাম না পেয়ে কৃষকেরা দিশেহারা।
বীজ ও সারের দাম বেশি হওয়ায় চাষে খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে আলুর দাম কিছুটা ভালো ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা কমে গেছে। গত তিন সপ্তাহ আগে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি হলেও এখন তা ৩৬০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কখনো কখনো ৫০০ টাকাও উঠছে।
আলুর ফলন বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ হচ্ছে। কিন্তু দাম কমে চাষিরা লোকসানে পড়ছেন। এক বিঘা জমির আলু উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজার টাকায়। এভাবে দাম কমলে কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।
এ উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন হাতিয়র গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, আমি এবার ৭০বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। কিন্তু ১০০ টাকা কেজি দরে আলু রোপণ করে বর্তমানে তা পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আলুর সঠিক দাম পেলে সেই টাকা দিয়ে আলু হিমাগারে রাখা যেত। কিন্তু কৃষকের হাতে এখন টাকা নেই। উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে ১৫টাকা থেকে ২০ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। আর জমিতে তা ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে । যে আলুর আবাদে কৃষকরা চড়া দামে আলুর বীজ ও কিটনাশক,সার ও শ্রমিক খরচ বিনিয়োগ করেছিল।
এ উপজেলার আরেক কৃষক পলাশ বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম, কিন্তু দাম এতটা কম হবে ভাবিনি। ৬৫ দিন বয়সী আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৭০ মণ করে। দাম কম হওয়ায় ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান হবে। ’
আলু ব্যবসায়ী এনামুল হক জানান,সম্প্রতি গ্রানুলা জাতের আলু ৩৬০ টাকা মণ ও এস্টেরিক জাতের আলু ৪২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকালের তুলনায় দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় আগামীতে দাম আরও কমতে পারে।
কালাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন,চলতি মৌসুমে এ বছর ১০ হাজার৭০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।এখানে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। যেমন ক্যারেজ, এস্টেরিক, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা,ও দেশী পাকরী। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশে ও বিদেশে আলুর চাহিদা রয়েছে। তাই হতাশ না হয়ে অপেক্ষা করুন। আশা করা যাচ্ছে দাম কিছুটা উন্নতি হবে।
কেকে/ এমএস