সাতক্ষীরায় ২৫ শতাংশ জমিতে চাষ হয়েছে লবণসহিষ্ণু বোরো ধান। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় লবণাক্ততার কারণে অনেক জমিতে ভালো ফসল হতো না। তবে এসব জমিতে এখন উচ্চফলনশীল জাতের বোরো ধান আবাদ হচ্ছে। আবাদের বিস্তারও বাড়ছে প্রতিবছর। চলতি মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে লবণসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের বোরো ধান আবাদ হয়েছে যা গত মৌসুমের তুলনায় ৪ হাজার হেক্টর বেশি।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ৭৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে লবণসহিষ্ণু জাতের ধান। গত মৌসুমে এর পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার হেক্টর।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রতিবছরই লবণসহিষ্ণু জাতের বোরা ধান উৎপাদন বাড়ছে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে সাত উপজেলায় ৭৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যার ২৫ শতাংশই লবণসহিষ্ণু।
গত মৌসুমে জেলায় ৭৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। এর মধ্যে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে লবণসহিঞ্চু জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়। তবে এ মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এ জাতের বোরো চাষ হয়েছে। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রি-৬৭, বিনা-১০ ব্রি-৯৭ ও ৯৯, যা ১২-১৩ ডিএস মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে।
আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের বোরো চাষী হাফিজুর রহমান জানান, তার এলাকার অধিকাংশ জমিতে উচ্চমাত্রার লবণ থাকায় সব জাতের ধান চাষ করা যায় না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কয়েক বছর ধরে লবণসহিষ্ণু জাতের বোরো ধান চাষ করছেন তিনি। চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে লবণসহিষ্ণু ব্রি-৬৭ জাতের ধান চাষ করেছেন তিনি। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে এ জাতের ধান চাষ করে ২৭ মণ পর্যন্ত ফলন পেয়েছেন। তার গ্রামের অনেকেই এখন লবণসহিষ্ণু ব্রি-ধান চাষ করছেন বলেও জানান এ কৃষক।
একই উপজেলার বিছট গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন জানান, তার গ্রামের সব জমিতেও মাত্রাতিরিক্ত লবণ। পাঁচ বছর আগেও এসব জমিতে বোরো চাষে ভালো ফলন হতো না। কেউ কেউ চাষ করলেও বিঘায় বড়জোর ১২ মণ ধান পাওয়া যেত, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অর্ধেক। চার বছর ধরে এ এলাকার কৃষকরা লবণসহিষ্ণু জাতের ধান চাষ করছেন। তিনি আরও জানান, এ এলাকার অধিকাংশ কৃষক চিংড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন লবণ পানির চিংড়ির ঘেরেই হচ্ছে বোরো ধান। অর্থাৎ একই ঘেরে মাছ উৎপাদন করে আবার ধানও চাষ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, উপকূলীয় সাতক্ষীরায় দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এ পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে ১৪টি লবণসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ব্রি ধান-৯৭, ৯৯, ৬৭ উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া উচ্চ ফলনশীল ১১৭, ১১৩ এবং ব্রি-৯ জাতের ধানের গবেষণাও প্রায় শেষের দিকে। এ জাতের ধান বীজ শিগগিরই বাজারে আসবে। এসব জাত ১২-১৪ ডিএস পর্যন্ত লবণ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে, প্রতি বিঘায় ২৬-২৭ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
কেকে/এএস