ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ‘স্পটলাইট ফিশিং’ নামে নতুন এক ভয়ংকর পদ্ধতিতে মাছ ধরা হচ্ছে, যা জলজ প্রাণী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী ও জলাশয়ে চায়না স্পটলাইট ব্যবহার করে মাছ ধরা হচ্ছে। ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন যুবক বাধা দেওয়ায় প্রতিনিধি ফিরে আসতে বাধ্য হন।
বর্ষা শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী, হাওর ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরতে জেলেরা নানা কৌশল অবলম্বন করে। তবে সম্প্রতি শক্তিশালী চায়না স্পটলাইট ও বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ব্যবহার করে মাছ সংজ্ঞাহীন করে ফেলা হচ্ছে, ফলে ছোট পোনা থেকে বড় মাছ—সব ধরা পড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চরশিবপুর, পাঠামারা, নিলখীসহ বিভিন্ন গ্রামে অবৈধভাবে এ পদ্ধতিতে মাছ ধরা হচ্ছে। একেকটি স্পটলাইট মেশিনের দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এসব মেশিন ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এক মৎস্যজীবী জানান, ১০ ফুটের মধ্যে থাকা সব ধরনের জলজ প্রাণী—মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া—এতে আটকা পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতি মাছের প্রজনন ব্যাহত করছে, উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মমতাজ জিন্নাত সাগর বলেন, মানুষের সচেতনতার অভাব এবং অবৈধ মাছ ধরার কারণে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এখন ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন।
স্থানীয়রা বলছেন, ১০-১৫ বছর আগেও চাঁই, পলো, বরশির মতো পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে মাছ ধরা হতো। কিন্তু এখন স্পটলাইট ও কারেন্ট জালের কারণে দেশীয় মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাঈদা ইসলাম বলেন, স্পটলাইট ইলেকট্রনিক ফিশিং সম্পর্কে শুনেছি, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, অবৈধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চায়না স্পটলাইট ও কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের মাছ শিকার পুরো জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করবে। তাই প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।
কেকে/এএম