কক্সবাজারের চকরিয়া ও আশপাশের এলাকায় হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব যেন থামছেই না। মানুষের অব্যাহত পাহাড় দখল, বন উজাড় এবং কৃষিজমি সম্প্রসারণের কারণে হাতির আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে নিজেদের জায়গা ফিরে পেতে বন্যহাতির দল কখনো বন বিভাগের বসতিতে, কখনোবা কৃষিজমিতে হানা দিচ্ছে। এরই প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা বন্যপ্রাণীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে, যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে বৈদ্যুতিক ফাঁদ।
গত এক মাসে কক্সবাজারের চকরিয়া, লামা, টেকনাফ ও আশপাশের এলাকায় চারটি হাতির মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ঘটনার পেছনে বৈদ্যুতিক ফাঁদের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সর্বশেষ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘূণিয়া আবুইল্লা ঘোনায় তামাকখেতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আরো একটি হাতি প্রাণ হারায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাঁসিয়াখালীর ঘুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশের একটি তামাকখেতে পড়ে আছে মৃত হাতিটি। এটি দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমেছে। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা কাছাকাছি যেতে নিষেধ করছেন। স্থানীয়দের মতে, তামাকক্ষেত রক্ষায় বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহার করা হয় এবং সেই ফাঁদেই মারা গেছে হাতিটি।
একজন স্থানীয় কৃষক জানান, হাতিগুলো যখন আসে, তখন আমাদের ফসল নষ্ট করে। আমরা কীভাবে বাঁচব? তামাকখেত রক্ষা করতে আমরা বিদ্যুতের তার বসাই, তাতে যদি হাতি মরে, আমাদের দোষ কী?
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন জানান, জানুয়ারিতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ বন্ধের বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছিল। এমনকি কিছু ফাঁদও অপসারণ করা হয়। কিন্তু এর কোনো কার্যকর প্রভাব পড়েনি।
তিনি বলেন, আমরা সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু মানুষ আইন মানছে না। উল্টো একের পর এক হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আমরা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছি, যেন বনভূমিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ না দেওয়া হয়। কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করছে।
চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মৃত হাতিটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন। তিনি জানান, বাহ্যিকভাবে হাতিটিকে সুস্থ ও সবল দেখাচ্ছিল। তবে বৈদ্যুতিক ফাঁদের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
এদিকে, বন বিভাগের জায়গায় অবৈধভাবে স্থাপিত বসতিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মারুফ হোসেন জানান, আমরা হাতি রক্ষায় কাজ করছি। কিন্তু মানুষের অসচেতনতা ও অবৈধ কার্যক্রমের কারণে হাতিগুলো বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
কেকে/এএম