শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক সম্মান ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। চলমান এ ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা সংকট নিরসনে ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা গ্রহণ করেছে নানা উদ্যোগ। তাদের এ উদ্যোগ ও কার্যক্রম বেশ চোখে পড়ার মতো। এ সকল উদ্যোগ ও কার্যক্রমকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
প্রতি বছর জাবির (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ক্যাম্পাসে আসেন। এ সময়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নিজেদের অবস্থান জানান দেয় নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। ইসলামী ছাত্রশিবিরও তার ব্যতিক্রম নয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী ছাত্রশিবির গ্রহণ করেছে নানা উদ্যোগ।
কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ভর্তিচ্ছুদের জন্য তথ্য সহায়তা ডেস্ক, অভিভাবকদের জন্য রয়েছে ‘গার্ডিয়ান লাউঞ্জ’। যেখানে বিশ্রামের পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বিভিন্ন ইসলামিক বই ও পত্রিকা। রয়েছে বিভিন্ন ফটক ভিত্তিক সহয়তা কেন্দ্র, জরুরি মেডিকেল সেবা, এমনকি দূর-দুরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থাও।
ঢাকার পীরেরবাগ থেকে আগত অভিভাবক সাইফুর রহমান বলেন, প্রথমেই আমি তাদের এ ব্যবস্থাপনাকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমার ছেলের ‘এ’ ইউনিটের ২য় শিফটে পরীক্ষা ছিল। রাস্তায় জ্যামের কথা চিন্তা করে আমরা একটু আগেই রওনা করলেও খুব একটা জ্যাম না পাওয়ায় দ্রুতই চলে আসি। এদিকে এত সময় কী করব সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না। কোথাও একটু বসে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তো হাঁটতে হাঁটতে ছাত্রশিবিরের এই গার্ডিয়ান লাউঞ্জ চোখে পড়ে। তাদের বুথে গিয়ে কথা বলতেই তারা আমাকে সেখানে বসার ব্যবস্থা করে দেয়। অভিভাবকদের জন্য অভিনব আয়োজন আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আরো চমকপ্রদ হয়েছি এখানে রাখা ইসলামিক বই ও পত্রিকা দেখে। সচরাচর এগুলো তেমন দেখা যায় না।
এ ছাড়াও তাদের আন্তরিক ব্যবহার ও সহায়তার ধরন আমাকে বিমহিত করেছে। এভাবেই এমন গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা জাতি গঠনের অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
পাবনা থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নাফিজ আহমেদ বলেন, আমি পাবনা থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছি। এখানে আমার তেমন পরিচিত কেউ না থাকায় থাকার জায়গার সমস্যা দেখা দেয়। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারপরে এলাকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ছাত্রশিবিরের এক ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। দুটি ইউনিটের পরীক্ষা থাকায় আমাকে তিন দিন থাকতে হয়েছে।এ তিন দিন আমি তাদের তত্ত্বাবধানেই ছিলাম। আমার সাথে আরো দুইজন পরীক্ষার্থী ছিল। তারা ময়মনসিংহ থেকে এসেছিলেন। ছাত্রশিবিরের ভাইদের ব্যাবহার এত অমায়িক যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। সার্বক্ষণিক আমাদের গাইড করেছেন। শিবিরের প্রতি একটা ভ্রান্ত ধারণা ছিল যা পুরোপুরি ঘুচে গিয়েছে। তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রশিবির জাবি শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পাশে থাকছে। বিশেষ করে যে সকল শিক্ষার্থী দূর-দুরান্ত থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছেন তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করছি। আমরা প্রত্যেকটা হলে থাকার ব্যবস্থা করেছি পাশাপাশি ক্যাম্পাসের বাইরেও থাকার ব্যবস্থা করেছি।শিক্ষার্থীদের তথ্য সরবরাহের লক্ষ্যে আমরা একটি ‘ইনফরমেশন বুথ’ এবং এর সাথে অভিভাবকদের বসার জন্য ‘গার্ডিয়ান লাউঞ্জ’ করেছি। সেই সাথে দূর-দুরান্ত থেকে আসার কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের প্রাথমিক সেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রাথমিক মেডিকেল সেবার ব্যবস্থা রেখেছি।
এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে কলম ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো বাইক সার্ভিস না থাকলেও যে-কোনো ধরনের জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছি।শিক্ষার্থীদের যে-কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের পাশে সব সময় আছে ইনশাআল্লাহ।
কেকে/এএম