গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বাসের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী ও কাজে বের হওয়া মানুষজন। জানা গেছে কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বাসের চালকরা। এতে করে গাড়ি বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারও যাত্রী।
আর ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, তুরাগ, অনাবিল ও এয়ারপোর্ট পরিবহনের চালকরা কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে চাইছেন না, সে কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, দুয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি ‘ঠিক হয়ে যাবে’।
সরেজমিন দেখা যায়, মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা, বাড্ডা, বিমানবন্দর, শেওড়া ও বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে শত শত যাত্রী যানবাহনের অপেক্ষায়। কেউ কেউ আবার টিকিট নিয়ে বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন কাউন্টারে। কিন্তু গাড়ির দেখা নেই।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচল একেবারেই কম দেখা যায়। যে অল্পসংখ্যক বাস চলাচল করছে তার বেশিরভাগই যাত্রীতে ঠাসা। ফলে অনেকে বাসে উঠতে পারছে না। এ অবস্থায় উপায় না পেয়ে অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কেউবা অটোরিকশা, কেউ কেউ রাইড শেয়ারিং বাইকে করে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে।
গত সপ্তাহে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর রুটে চলাচল করা বাস গোলাপি রং করে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। প্রাথমিকভাবে ২১ কোম্পানির ২,৬১০ বাস গোলাপি রঙের ই-টিকিটিংয়ের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এরপর থেকেই মূলত গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট দেখা গেছে।
রাজধানীর খিলক্ষেত মোড় থেকে মহাখালী যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, কিন্তু বাস নেই। অফিস টাইমে শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, যে অল্পসংখ্যক বাস আসছে সেগুলো যাত্রীতে ঠাসা, ওঠা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পরে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে রাইড শেয়ারিং বাইকে অফিসে যাচ্ছি।
একইভাবে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে পল্টন মোড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বাসের রং পরিবর্তন করে টিকিট সিস্টেম হওয়ার কারণে অনেকেই বাস নামাচ্ছে না সড়কে। তাই গণপরিবহন সংকট। কাজে বের হওয়া হাজার হাজার মানুষ সড়কে এসে ভোগান্তিতে পড়েছে। যারা ইচ্ছা করে যাত্রীদের এমন ভোগান্তিতে ফেলে বাস নামায়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। মানুষের এমন ভোগান্তি দেখে রিকশা, সিএনজি, রাইড শেয়ারিং বাইক সবাই অতিরিক্ত ভাড়া চাইতে শুরু করেছে।
বাস সংকটের কারণ জানতে চাইলে এ রুটে চলাচলকারী ভিক্টর বাসের সহযোগী রিপন মিয়া বলেন, যেহেতু এই সড়কে চলতে হলে বাসকে গোলাপি রং হতে হবে, তাই অনেক বাস মালিকই তাদের বাস রং করতে দিয়েছে। আর এই টিকিট সিস্টেম হলে বাসচালক, হেলপাররা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই অনেকে বাস নামাচ্ছে না।
তুরাগ বাসের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাসের গোলাপি রং, টিকিট পদ্ধতি না থাকলে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। যারা বের হচ্ছে তারাই নিয়ম মেনে না চললে মামলা খাচ্ছে, তাই ভয়ে অনেকে বাস বের করছে না। এ ছাড়া এ পদ্ধতির কারণে বাসের ড্রাইভার, হেলপার সবচেয়ে লসে পড়বে, সে কারণে তারা ইচ্ছা করে বাস নামাচ্ছে না।
রাজধানীর রামপুরা সড়কে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্য এরশাদ আলী বলেন, সকাল থেকেই সড়কে বাসের সংখ্যা অনেক কম। মূলত বাসের রং আর টিকিট সিস্টেমের বাধ্যবাধকতার কারণে বাস নামায়নি অনেকে। আসলে তারা শৃঙ্খলার এ পদ্ধতিতে বাস চালাতে চায় না, সে কারণে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম জানান, ‘কয়েকটি পরিবহনের চালকরা কাউন্টারে বাস চালাতে চাচ্ছেন না। এতে কয়েকটি সড়কে বাস কম চলছে। শুরুতে আপত্তি জানালেও ইকবাল, বলাকা পরিবহনের বাস চলাচল শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, চুক্তিতে গাড়ি চালিয়ে বেশি লাভ করত এমন চালকরা এ বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। তাদের ‘বোঝানোর’ চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘বলাকার গাড়ি চলছে, রাইদার কিছু গাড়িও চলা শুরু করেছে। চালকদের মধ্যে দুইটা গ্রুপ আছে তাদের ডাকছি ওইটা ঠিক করে দেব আজকে। বিমানবন্দর পরিবহন মঙ্গলবার লোকাল করেছিল। মালিকদের পরে প্রেশার দেওয়া হইছে যেন কাউন্টারে চালায়। এটা ঠিক হইতে দুয়েকটা দিন লাগবে আরো।’
সাইফুল আলম বলেন, ‘পয়সা-কড়ি অন্যায়ভাবে ইনকাম করে যদি অভ্যাস হয়ে যায়, তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। তারা এখন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালাত, মালিককে ২০০০ টাকা জমা দেয়। তারা ইনকাম করত ৫-৬ হাজার টাকা। এখন ন্যায্য বেতন নিলে হয়তো ২ হাজার পাবে। এই একটা বিষয় আছে। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, লাগলে বেতন আরো বাড়িয়ে দেব। পাশাপাশি তাদের ইন্ধনও দিচ্ছে কেউ কেউ।’
কেকে/এআর