ফেব্রুয়ারি মাস এলে সারা দেশের সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব জায়গায় শহিদ মিনারের সৌন্দর্য ও পরিচর্যার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ভাষা দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয় শহিদ মিনারে। এদিকে ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে, অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
শহিদ মিনারের আশপাশে নোংরা হয়ে আছে। গাছের শুকনো পাতা, ধুলো আর আবর্জনার স্তূপ লক্ষ করা যায়। লোহায় মরিচা পড়েছে, মিনারের গায়ে লেগেছে শেওলার আস্তরণ। দীর্ঘদিন রং না করায় এর সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। ২০১০ সালে পুনর্নির্মাণের পর দীর্ঘ ১৪ বছরেও কোনো সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে ব্যয়বহুল শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যসহ অন্যান্য স্থাপনা ও ম্যুরাল।
শহিদ মিনারের সুরক্ষার জন্য কোনো সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি। ফলে পথচারী, বিড়াল, কুকুরেরও অবাধ বিচরণ রয়েছে সেখানে।
নজরুল ভাস্কর্য, জয়বাংলা ভাস্কর্য ও চির উন্নত মম শির স্মৃতিস্তম্ভের বাইরেও ক্যাম্পাসে একটা ভাষা শহিদ মিনার রয়েছে, তা জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী। ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ অনিক বলেন, শহিদ মিনার কেবল ২১ ফেব্রুয়ারিতেই একদিনের জন্য ব্যবহার করা হয়, বাকি সময় অবহেলায় পড়ে থাকে। অথচ এটি আমাদের ইতিহাস ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যতগুলো প্রকল্প চলছে, সেগুলোর মধ্যে শহিদ মিনারের কোনো বাজেট নেই।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, ম্যুরালসহ নানা স্থাপনা নির্মাণে মোটা অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ থাকলেও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ প্রান্ত বলেন, শহিদ মিনার শুধু ফেব্রুয়ারিতে নয়, সারা বছরই যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। আমাদের ইতিহাসের স্মারক যদি অবহেলিত হয়, তাহলে নতুন প্রজন্ম কীভাবে আমাদের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝবে?
শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত শহিদ মিনারটির সংস্কার ও নিয়মিত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও শুদ্ধ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
কেকে/এএস