শরিয়তপুরে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লি. (বিএটিবি)-এর গোডাউনে সংঘটিত দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটান এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে লুন্ঠনকৃত ১৮ লাখ, ৫৮ হাজার, ৯৬৫ টাকা, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি পিকআপ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, একটি ১৫০ সিসির পালসার মোটরসাইকেল এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মেহেরাজ (৫০), মোরশেদ (৩০) ও মিলন মোল্লা (৩০)। তাদের সকলের বাড়ি খুলনা জেলায়।
এ বিষয়ে বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় শরিয়তপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা হতে রাত সাড়ে ৪টার মধ্যে পালং মডেল থানাধীন শরিয়তপুর জেলা শহরের উত্তর পালং মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড-এর অফিসের গোডাউনে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হয়।
এ সময় গোডাউনের পশ্চিম পাশের জানালার গ্রীল কেটে অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনের ডাকাতদল ভেতরে প্রবেশ করে এবং বিক্রয়কেন্দ্রের সহকারী গোডাউন কিপার লাকু খান, সহকারী কম্পিউটার অপারেটর শাকিল ও পিয়ন মোহাম্মাদ আলীকে মারধর করে দেশীয় অস্ত্রের মুখে হাত-পা বেঁধে ফেলে।
পরবর্তীতে গোডাউনে রক্ষিত ক্যাশ ভল্ট কেটে ভল্টে রাখা মোট ১ কোটি ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০৭ টাকাসহ অফিসে থাকা ১৬টি সিসি ক্যামেরা, ডিভিআর ও এনভিআর খুলে নিয়ে যায় ডাকাত দল।
এ ঘটনায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড-এর পক্ষে মো. শফিউল আলম শিহাব বাদী হয়ে গত ২৬ জানুয়ারি পালং মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলামের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আদিবুল ইসলাম, পিপিএম-সেবা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবিবের নেতৃত্বে পালং থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত যৌথ টিম ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে।
বিশেষ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনাস্থলের ফুটেজ সংগ্রহ, গ্লোবাল লোকেশন ট্র্যাকিং এবং পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের ডাকাতি মামলাসহ গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান শুরু করা হয়। ঘটনাস্থলের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে কয়েকজন ডাকাতকে শনাক্ত করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা মেট্রোপলিটান পুলিশের সহযোগিতায় খুলনা মেট্রোপলিটান এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের সদস্য মেহেরাজ (৫০), মোরশেদ (৩০) ও মিলন মোল্লা (৩০) কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতেরা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে অন্যান্য ডাকাতদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন। তাদের কাছ থেকে লুন্ঠনকৃত ১৮,৫৮,৯৬৫ (আঠারো লক্ষ আটান্ন হাজার নয়শত পয়ষট্টি) টাকা, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ১ টনের পিকআপ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, একটি ১৫০ সিসির পালসার মোটরসাইকেল এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
নথিপত্র পর্যালোচনায় মেহেরাজ-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা, মোরশেদের বিরুদ্ধে ২টি এবং মিলন মোল্লার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তীতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আদিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবিব, পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবু বকর মাতুব্বর।
কেকে/এএম