রংপুরের গঙ্গাচড়ার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘট নদ। একসময় সোজাপথে প্রবাহমান নদটি ছিল রূপ ও সৌন্দর্যে ভরা। কিন্তু প্রতিবছরে বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে হারিয়ে যাচ্ছে নদের নাব্যতা।
হারাচ্ছে তার সেই চিরচেনা যৌবন। পানি শূন্য নদের বুকে এখন ধানসহ নানা ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এখন এ নদের বুকে দৃষ্টি দিলে মনে হয় এটি কোনো বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
সম্প্রতি সরেজমিন উপজেলার বেতগাড়ী, বড়বিল, আলমবিদিতর এলাকার ঘাঘটের বুকে দেখা গেছে- ধান, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুনসহ বিভিন্ন সবজি ও ফসল চাষাবাদের দৃশ্য। এ নদের বুকে বোরো ধান চারা রোপণ করেছেন জলিল (৫০), মোজাম্মেল (৫৫)-সহ আরো একাধিক কৃষক। সরকারিভাবে নদী রক্ষায় তৎপর না থাকায় ঘাঘট এখন কেবলই নামসর্বস্ব নদী বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
জানা যায়, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার কুজিপাড়া গ্রামে তিস্তার শাখানদ হিসেবে ঘাঘটের যাত্রা শুরু। পরে এটি গঙ্গাচড়া উপজেলার পশ্চিম সীমানা দিয়ে নোহালী, আলমবিদিতর ও বেতগাড়ী ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে রংপুর সদর থানা অতিক্রম করে পীরগাছা উপজেলায় প্রবেশ করেছে। আঁকাবাঁকা পথে ঘাঘটের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার।
শুকনো মৌসুমে ঘাঘটের পানিপ্রবাহ এখন শূন্যের কোঠায়। অথচ বর্ষাকালে নদীভাঙনে প্রতিবছর বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও স্থাপনা। নদটি খনন করা হলে কৃষকরা উপকৃত হবে বেশি। সেইসঙ্গে বাড়বে মাছের উৎপাদন। তা না হলে স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাবে এ নদটি।
বেতগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাইমিন ইসলাম মারুফ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ঘাঘট নদ খনন না করায় ভরাট হয়ে গেছে এর তলদেশ। বর্ষাকালে অল্প পানিতে নদ ভরাট হয়ে বন্যা দেখা দেয়। নদতীরবর্তী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সে সঙ্গে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, নদটি খনন করে শুকনো মৌসুমে নদের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা যেত, পাশাপাশি বর্ষাকালে প্রচুর মাছ উৎপাদন হতো। ফলে অনেকের জীবিকা নির্বাহের পথ আরো সুগম হতো।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান বলেন, ঘাঘট নদের কিছু অংশ খনন করা হয়েছে। তবে গঙ্গাচড়া পয়েন্টে খনন করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, ঘাঘট নদের উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ পর্যন্ত খননের জন্য একটি সমন্বিত প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।
কেকে/এএস