আয়নাঘর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় সাহস করে কেউ সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসেননি। নেত্র নিউজের সাংবাদিক তাসনিম খলিলের অনুরোধে সর্বপ্রথম রাজি হন মালয়েশিয়া যুবদল নেতা শেখ মো. সেলিম হোসাইন। এছাড়াও আল-জাজিরার সাংবাদিক সায়ের জুলকারনাইনের মাধ্যমে রাজি করানো হয় কর্নেল হাসিনুর রহমানকেও। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এক ফেসবুক পোস্টে এমন তথ্য জানান।
আরো জানা যায়, জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে থেকে আয়নাঘরকে জনসম্মুখে আনেন কর্নেল হাসিনুর রহমান। তিনি আয়নাঘরের বিস্তারিত জেনে ছিলেন দাবি করেন। প্রথমে আল-জাজিরা টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দেন, তা বিশেষ কোনো কারণে হয়ত প্রচার হয়নি। ওনাকে সাহায্য করেন জুলকারনাইন সায়ের, তারপর জুলকারনাইনের হাত ধরে তাসনিম খলিলের নেত্র নিউজ। যা প্রচার হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক ফেসবুক পোস্টে কর্নেল হাসিনুর রহমান এমন তথ্য প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কর্নেল হাসিনুর রহমানের ফেসবুক পোস্ট তুলে ধরা হলো- ‘চরমভাবে মর্মাহত। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে থেকে আয়নাঘরকে জনসম্মুখে আনি আমি। আমি আয়নাঘরের বিস্তারিত জেনে ছিলাম। প্রথমে আল-জাজিরা টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দেই, তা বিশেষ কোনো কারণে হয়ত প্রচার হয়নি। আমায় সাহায্য করে জুলকারনাইন সামীর, তারপর জুলকারনাইনের হাত ধরে তাসনিম খলিলের নেত্র নিউজ। যা প্রচার হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। এরপর বিদেশি বাংলা চ্যানেলগুলোতে জেনারেল আজমী জীবিত এবং আয়নাঘরের অবস্থান সুন্দর করে বুঝিয়ে দেই। আমার বিরুদ্ধে ১০টির অধিক আইসিটি ধারায় মামলা হয়। মানবাধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টি উপস্থাপন করি।’
এতে তিনি লিখেন, ‘গতকাল প্রধান উপদেষ্টা সরজমিন দেখতে যান। আমি ছাড়া অনেকেই ছিলেন। যারা গিয়ে ছিলেন তাদের লজ্জা লাগেনি। আমি মনে করি, সব কিছু বলে খোলসা করে দিব। ১১ তারিখ রাতে গুম কমিশনের সদস্য নাবিলা আপুকে রিং করে ছিলাম। এমন ভাব নিলেন উনি তেমন ওয়াকিবহাল নন। তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম পরিদর্শনের বিষয়ে সবটাই নাবিলা করেছেন। এখন কথা, নাবিলা আমাকে কেন সংযুক্ত করেননি। আসলে নাবিলা পর্দার আড়ালে ফ্যাসিস্টকে সাহায্য করেছে। যারা গিয়েছেন তারা সরকারের জন্য তথা মামলা প্রমাণে ভূমিকা রাখতে পারবে না। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে যদি একজনের নাম থাকে, তা আমার থাকার কথা। আসিফ নজরুল ও নাবিলা গং-দের নজরে রাখতে হবে।’
একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার জানিয়ে তিনি আরো লিখেন, ‘গুম হওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের শেরাটনের খাবার ও হুর পরীদের সেবাযত্ন যদি দেওয়া হয় তাতে গুম অপরাধের গুরুত্ব কমে না। তবে তুলনা করা যায়, আমরা কে কেমন ছিলাম। জেনারেল আজমী ছিলেন এসি রুমে, খাবার পছন্দে স্বাধীনতা ছিল, ব্যারিস্টার আরমান ভাই উচ্চ কমপ্লেক্সে ছিলেন। এখানে গরম কম। আর আমি ছিলাম ওভেনে। ১০ রুমের কমপ্লেক্স। কূটনৈতিক ক্যাপ্টেন মারুফ জামানের ভাষায়, আমার সেলগুলো হলো টর্চার সেল। কারণ তিনি উভয় সেলে ছিলেন। আরমান ভাই কোনো সুবিধা পাননি যা জেনারেল আজমী পেয়েছন। আমি তো তুলনা করবই। একে ১০ সেল তার সঙ্গে বড় বড় শব্দ সৃষ্টিকারী এক্সস্ট ফ্যান। সব কিছু মিলিয়ে ব্যারিস্টার আরমান ভাইকে দীর্ঘ আয়ুর জন্য দোয়া রইল।’
তিনি আরো লিখেন, ‘বি জেনারেল হাসান নাসিরসহ আমরা আয়নাঘর থেকে বন্দিদের মুক্তির জন্য কচুখেত চেকপোস্টের সামনে ৫ আগস্ট ২০২৪ মধ্যে রাত পর্যন্ত দাবি নিয়ে ছিলাম। গুম কমিশনের নাবিলা আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। জেনারেল আজমীর কী উচিত ছিল না- বি. জেনারেল হাসান নাসির ও হাসিন কেন থাকবে না এটা জানা।’
কেকে/এজে