শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
৯ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস       হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের      কর্মবিরতি স্থগিত, একুশে ফেব্রুয়ারি চলবে মেট্রোরেল      জামায়াত আমিরের স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা      অনিশ্চিয়তায় না রেখে দ্রুত নির্বাচন দিন: মির্জা ফখরুল       দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার      হৃদয়ের বীরত্বগাথা সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ের পুঁজি পেল বাংলাদেশ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
বড় ডেভিলরা অধরা
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫৬ এএম আপডেট: ১৪.০২.২০২৫ ৯:০২ এএম  (ভিজিটর : ৯১)
ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার

ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার

দেশজুড়ে অপরাধীদের ধরতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। অধিকাংশ সাধারণ জনগণ এই অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অপারেশন ডেভিল হান্টে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার এবং বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো বড় কোনো অপরাধী ধরা না পড়ায় অভিযানের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে এই অভিযান দীর্ঘমেয়াদী হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, ছোট-বড় সকল অপরাধী অপারেশন ডেভিল হান্টে ধরা পড়বে। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তারাও রেহাই পাবে না।

পুলিশ সদরদপ্তর জানিয়েছে, গেলো ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬৬ জনকে সরাসরি অভিযানে এবং এক হাজার ৯৯ জনকে বিভিন্ন মামলা ও ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অভিযান চলাকালে বেশ কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- দুইটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি ছোরা ও একটি রামদা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে মোট ৭ হাজার ৯৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর পর থেকে অন্যান্য অপরাধ কমে গেছে। গ্রেফতার হয়েছেন চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, বিভিন্ন অপরাধে জড়িতরা গ্রেফতার হলেও ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান শাহারিয়া আফরিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা, সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই কর্মসূচি শুরু হয়। যদিও নানা ধরণের বিতর্ক রয়েছে। কিভাবে ডেভিল চিহ্নিত করা হচ্ছে, কে ডেভিল বা কোন ক্রাইটেরিয়ায় কাকে ডেভিলের মধ্যে ফেলছেন। এটা একটা বড় বির্তকের বিষয়। এর আগে টুপি-জাঞ্জাবি পরা থাকলে হয়ত আমরা তাকে ডেভিল মনে করতাম। এখন আবার দেখা যাচ্ছে একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাকে ডেভিল বলে গণ্য করা হচ্ছে। মুসলিম বা ধর্মভিরু সবাই তো জঙ্গি না বা সবাই খারাপ না। এখন আবার যারা আগের সরকারের সঙ্গে জড়িত ছিল সবাই খারাপ কাজ করে নাই। এগুলো মানুষের মধ্যে আরো কনফিশন সৃষ্টি করছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যাচ্ছে- দিনে-দুপুরে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, হত্যা যেভাবে হচ্ছে- মনে হচ্ছে অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অবশ্যই এ ধরনের কর্মসূচি দরকার, যারা এই নেগেটিভ কাজগুলো করতে সহায়তা করছে বা উসকে দিচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে এই কাজগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই। তার মানে এই নয় যে, আগের সরকারের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তার বাসায় আগুন দিতে হবে, তাকেই ডেভিল বানাতে হবে। এটা যদি কর্মসূচি হয় তাহলে এই কর্মসূচি কখনই আলোর মুখ দেখবে না। যেই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি সেটা সফল হবে না এবং আমরা যে সমস্যার মধ্যে ডুবে যাচ্ছি সেখান থেকে উত্তরণে পথ কঠিন হয়ে যাবে।’

শাহারিয়া আফরিন বলেন, ‘এখন যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তারা একদমই পেটি নেতাকর্মী। যারা মূল পরিকল্পনাকারী, বিভিন্ন ধরণের করাপশনের সঙ্গে যুক্ত ছিল বা একেবারে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, পাওয়ারকে এবিউজ (অপব্যবহার) করেছে। তাদেরকে তো আপনি পার করে দিচ্ছেন। বিভিন্ন সময় লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করেছেন। আপনারাই আবার মাঠে নামছেন তাদের ধরার জন্য। এটা কনফ্লিক্টিং (সাংঘর্ষিক) হয়ে গেল না। আমরা দেখলাম আমাদের সেনাপ্রধান বলেছেন, ক্যান্টনমেন্টে এতজন ছিল, শুনেছি পার হয়ে যেতে, বর্ডার ক্রস করতে সাহায্য করা হয়েছে। আবার তারাই তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে খুঁজে বের করার জন্য। এই ধরণের কার্যক্রম বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর মানুষের বিশ্বাস জন্মায় না। পুলিশকে আরো জনগণের কাজে আসতে হবে। কমিউনিটি প্রোগ্রাম করতে হবে।’

এদিকে বাংলাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে নিরাপত্তা ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রাজনৈতিক সহিংসতা বিচারে নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসন নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্টে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিপীড়ক সরকার। ওই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড (বিজিবি), র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়েছিল।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা খাত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ জন্য সরকার সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে মোতায়েন করেছে। অভিযানে প্রায় ২ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, দশকের পর দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নের পর বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা উচিত হবে না এবং নিরপেক্ষ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গুলি এবং গণহারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মতো ঘটনা রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একটি ‘বিশৃঙ্খল চিত্র’ তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ‘জাতীয় ক্ষত সারিয়ে তোলার জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার জরুরি’।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারি সমর্থকের উদ্দেশে ভারত থেকে বক্তৃতা দেওয়ার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। ওই ঘোষণা ঘিরে সাম্প্রতিক সংঘাত শুরু হয়। যেসব শিক্ষার্থীসহ অন্যরা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন, তারাই আবার বিক্ষোভ শুরু করেন। শেখ হাসিনার পরিবার ও দলের সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেন।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত একটি মৌলিক অধিকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এমনকি সাবেক কর্তৃত্ববাদী সরকারের সমর্থকেরাও যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন, তার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত সরকারের।

মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের দমনপীড়নের কারণে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি তাঁদের প্রাপ্য। তবে এটা অধিকারের প্রতি সম্মান রেখেই করতে হবে। ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধের সাজা দিতে হবে। তবে সরকার যখন বিরোধীদের ‘ডেভিল’ হিসেবে আখ্যা দেয়, তখন তা নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

কেকে/এজে

আরও সংবাদ   বিষয়:  বড় ডেভিল   অধরা   অপারেশন ডেভিল হান্ট  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে নারীসহ গ্রেফতার ৪
শরীয়তপুরে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচি
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের

সর্বাধিক পঠিত

দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার
অযত্ন অবহেলায় রৌমারীর প্রথম শহিদ মিনার
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
কাপাসিয়ায় গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝