চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পিংক সিটি-২ আবাসিক প্রকল্পের বরাদ্দকৃত প্লট বাতিলের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসী। গেল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কের পাশে রাউজান পাহাড়তলী ইউনিয়নে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এ প্রকল্পটি বাতিলে স্বোচ্চার হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। এ প্রকল্পের অধীনে ২৩৬টি প্লট বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখানে একটি ছিল পাঁচ কাটা প্লট। সেটি রাখা হয় সাবেক সংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর পরিবারে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘এ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তরা প্লট বরাদ্দ পায়নি। এমনকি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আছে জমি হারিয়েও ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি। রাউজান আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পিংক সিটি-২ এ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে রাউজান পাহাড়তলী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘পিংক সিটি প্রকল্পের নামে এখানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের মতাদর্শের বাইরে একজন ব্যক্তিও প্লট পায়নি। এমনকি ক্ষতগ্রস্ত জমির মালিকদের মধ্যেও আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকিরা কেউ প্লট পায়নি। অনেক জমি হারিয়েছে অথচ এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি। প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ স্বচ্ছতা হয়নি। তাই আগের বরাদ্দ বাতিল করে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।’
কদলপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আবদুস সবুর বলেন, ‘রাউজান পিংক সিটিতে শুধু যে, আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাই প্লট বরাদ্দ পেয়েছে তা নয়, ওই সময় রাউজান থানার যেসব অফিসার বিএনপিবিরোধী ছিল নেতাকর্মীদের নির্যাতন করতো তাদের খুশি করতে রাউজান পিংক সিটি-১ এবং রাউজান পিংক সিটি-২ এ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোন অফিসারকে সরাসরি প্লট দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক অফিসারের আত্মীয়স্বজনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
পিংক সিটিতে জমি হারানো পাহাড়তলী বদুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার ৪৪ শতক জমি পিংক সিটিতে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে আমার বাড়ি ছিল। পরিবার নিয়ে এ বাড়িতে থাকতাম। গাছপালা ছিল। সব কিছুর ক্ষতিপূরণ বাবদ আমাকে মাত্র তিন লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল। আমি ওই টাকা নিইনি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার হিসেবে আমি তিন কাটার একটি প্লট চেয়েছিলাম। আমাকে তাও দেওয়া হয়নি। পিংক সিটিতে আমার বাড়িঘর সবই গেল। আজও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। এখানে প্লট বরাদ্দ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়নি। প্লট বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
নানা অস্বচ্ছতায় ভরা প্রশ্নবিদ্ধ পিংক সিটি প্রকল্পে ৫ আগস্টের পর লটারিতে বরাদ্দপ্রাপ্তদের অধীনে তড়িঘড়ি করে রেজিস্ট্রি দেওয়া শুরু করেছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টিকে রহস্যজনক বলছেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম ডিভিশনের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নেজামুল হক মজুমদার বলেন, ‘রাউজান পিংক সিটিতে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’
চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাউজান পিংক সিটি-২ এ আবাসিক প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের জন্য লটারির ফলাফল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৩৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে পাঁচ কাটার একটি প্লট ছিল। সেটি পেয়েছে রায়না সহিদ চৌধুরী তার পিতার নাম এম এ সেলিম। সরকারি চাকরিজীবী কোটায় দেওয়া হয় ৩০ প্লট, বেসরকারি চাকরিজীবীদের কোটায় দেওয়া হয় ৪৭ প্লট, প্রবাসী কোটায় দেওয়া হয় ১০ জনকে, ব্যবসায়ী কোটায় দেওয়া হয় ৭৯ জনকে, ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় ৭ জনকে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ জনকে, বিশেষ পেশায় ৮ জনকে, মন্ত্রণালয়/জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ৭ জনকে, অন্যান্য কোটায় ৪২ জনকে এ আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কেকে/এজে