আজ পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতি। কোকিলের ডাকে মাতোয়ারা চারপাশ। উতলা মন আর ঘরে থাকে না। বেরিয়ে পড়ে প্রিয়জনের হাত ধরে উৎসব বিহারে। কারণ বসন্ত এসে গেছে ভালোবাসার পসরা নিয়ে।
এক সময় পাশাপাশি দুই দিন পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হতো। তবে পঞ্জিকা সংশোধনে কয়েক বছর ধরে প্রেম ও প্রকৃতির উৎসব দুটো একই দিন উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার দিবস দুটি শুক্রবারে পড়ায় উৎসবপ্রিয় জাতির কাছে এ যেন মধুচন্দ্রিমা।
বসন্ত প্রেমের ঋতু। ফাল্গুনে শুরু হয় ভালোবাসার গুনগুনানি। শুধু প্রকৃতি নয়, মানব মনও রঙিন হয়ে ওঠে। খুলে যায় দখিনা দুয়ার। কী নেই বসন্তের! রং, রূপ, রস ও লাবণ্য- সব রয়েছে। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। পাহাড়, বন, নগর, বন্দর- সব রঙিন হয়ে উঠবে বসন্তের আগমনে। রঙিন প্রজাপতির ডানায় প্রেমের বার্তা। ডালে ডালে শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়াদের মিছিল। কবিগুরু ভাষায় ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’ তারপরও হুট করে বিষণ্ন দুপুরে কোকিলের কুহু ডাকে মন কেমন করে ওঠে। যেন দূরের কোনো বেদনা মনে উঁকি দেয়। কবি নজরুলের কবিতার মতো ‘এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে/ অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে/ জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।’
প্রাচীনকাল থেকে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে আসছে। খ্রিষ্টের জন্মের বেশ কয়েকশ বছর আগে মানুষ বসন্ত উৎসব পালন করত। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরে খোদাই করা বসন্ত উৎসবের নমুনা পাওয়া গেছে। সব জাতির পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাতে এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। বেদ, পুরাণেও এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। একই সঙ্গে প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলাদেশে ঘটা করে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপনের রীতি চালু হয়। এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বসন্ত বরণ। পহেলা ফাল্গুন দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমের ভ্যালেনটাইন্স ডে দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ভালোবাসার যুগল কাব্যে ভরে ওঠে পথপ্রান্তর। যেন ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’ শুধু কি যুগল ভালোবাসা? না। এখন ভালোবাসা দিবস হয়ে গেছে সর্বজনীন। আবালবৃদ্ধবণিতার প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে চারপাশ। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় উৎসব হয়ে উঠেছে আরও রঙিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে বলতে হয়, ‘আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে- দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।’
কেকে/এজে