ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের কদমতলী কান্দাপাড়া মরহুম মোহাম্মদ মোরশেদ মিয়া বেপারীর স্মরণে দুই দিনব্যাপী ৪ হাজার লোকের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেজবানটি সফল করতে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত ২ দিন বিনাপারিশ্রমিকে শ্রম দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মোরশেদ ট্রেডার্সের আয়োজনে এই মেজবান বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু করে আজ শুক্রবার ২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হওয়ার পর শেষ হয়।
মরহুম মোরশেদ মিয়ার ছেলে আবু হানিফ, আবুল হোসেন, বাবুল ও রাসেল মিয়ার অবস্থানরত বেশ ঘটা করে এই মেজবানের আয়োজন করে থাকেন।
উপজেলার কদমতলীতে ঐতিহ্যবাহী মেজবান আদিকাল থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। এই ঐতিহ্যবাহী মেজবান সম্পর্কে জানা যায়, ৪ শত বছর ধরে বাঞ্ছারামপুর মেজবানের প্রচলন শুরু হয়।
অতীতে ধনী লোকেরা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে গরিব লোকদের উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করতেন। সেই থেকে মেজবানের প্রচলন চলে আসছে।এই মেজবানকে স্থানীয় ভাষায় মেজ্জানি বলা হয়ে থাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাইরে অন্যান্য জেলায় এই মেজবানকে জেয়াফত বলা হয়।
মেজবান সাধারণত কারো মৃত্যুবার্ষিকী, কুলখানি, চল্লিশা, ওরশ শরিফ, মিলাদ মাহফিল, নতুন বাচ্চার আকিকা, গায়ে হলুদ, নতুন ঘরে ওঠা অথবা নতুন ব্যবসায়-বাণিজ্য শুরু করার আগে মেজবানের আয়োজন করে থাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঐতিহ্যবাহী মেজবানে যেসব খাবারদাবার পরিবেশন করা হয়, সেগুলো অসাধারণ সুস্বাদু হয়ে থাকে।
বহু লোকসমাগম ও মজাদার খাবারের প্রতি সবার বেশ আকর্ষণ থাকে। মেজবানের খাবারের সঙ্গে অন্যান্য খাবারের তুলনা চলে না।
মেজবানে সাধারণত গরুর মাংস দিয়ে নানা পদের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে, রান্না করা গরুর মাংস, চনার ডাল, গরুর নলা, মাষকলাই ডাল, গরুর কালোভুনা তৈরি করা হয়ে থাকে।
এসব মজাদার খাবারের প্রতি ধনী-গরিব সবার বেশ আকর্ষণ থাকে। কোনো মেজবান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে সবাই বেশ আগ্রহের সঙ্গে এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতিটি মেজবানে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, গয়াল জবাই করা হয়। হাজার হাজার মানুষকে আপ্যায়ন করার জন্য অসংখ্য গরু, মহিষ জবাই করা হয়। বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে মেজবানি খানা রান্না করা হয়। শত শত মানুষ মেজবানি খাবার রান্না করা এবং আয়োজনের ব্যাপারে সম্পৃক্ত থাকে। একসঙ্গে অসংখ্য মানুষ এখানে খাবার গ্রহণ করে থাকে।
দেশের সর্ববৃহত্ এই অনুষ্ঠানে গ্রাম, মহল্লা থেকে সব শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে। ধনী-দরিদ্র, শ্রেণি-পেশা বা ধর্ম সবার জন্য থাকে উন্মুক্ত।
মহরম মোরশেদ মেয়াদ ছেলে আবুল হোসেন বলেন, আমার বাবার স্মরণে এ মেজবাহিনী অনুষ্ঠান করা হয়েছে। আমরা সবাইকে খাওয়াতে পেরে অনেক আনন্দিত। আল্লাহ যেন আমাদের এভাবে চালিয়ে যাওয়ার তৌফিক দান করে।
প্রতিবেশী ফারুক ও ইকবাল মুক্তার বলেন, এত বড় অনুষ্ঠান আমরা কখনো দেখি নাই, এই অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখে আমরা খুব আনন্দিত। সবাই আমরা একত্রিত হয়েছি। আত্মীয়-স্বজন অনেক মানুষ একত্রিত হয়েছে। সবাই তাদের সহায়তা করেছি, যেনো হাজার হাজার মানুষকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ানো সম্ভব হয়।মেজবানে বিভিন্ন খাবার আইটেম ছিলো। এত বড় মেজবান অনুষ্ঠান দেখে আমরা আনন্দিত।"
কেকে/এআর