চলতি মৌসুমের অতি বৃষ্টিতে ধানগাছ নষ্ট হওয়ায় মাগুরার শালিখায় বিচুলির (গো-খাদ্য) মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিচুলির তীব্র সংকট। যা একটু মিলছে তার দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
গত কয়েক মাস আগেও প্রতি কাউন (১২ শ ৮০ মুঠো) ১৫ শ থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। ফলে গবাদিপশু নিয়ে খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকেটা বাধ্য হয়ে কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন শখের গরু।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার অনেক পরিবার গবাদিপশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকেই গবাদিপশুর ছোট ছোট খামার গড়ে তুলেছেন। এসব পশুর খাদ্যের জন্য ধান মাড়াই শেষে ধানগাছ মজুদ রাখেন, যা সারা বছর গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চলতি বছর জুলাই মাসের শেষ থেকে অক্টোবর মাসের শেষ অবধি ভারী বর্ষণে চাষিদের জমিতে শুকাতে দেওয়া বিচুলি পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়েছে গেছে।
এদিকে সঞ্চিত খড় বা বিচুলি শেষ যাওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদা বাড়ায় উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী খড় বিক্রি শুরু করেছেন। তারা পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে বিচুলির গাদা ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন চড়া মূল্যে। কম পুঁজির খামারিরা এসব বিচুলি কিনে সামান্য পরিমাণে খাবার দিয়ে গরুগুলোকে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখছেন।
বয়স্ক একটি গরুর জন্য দৈনিক খড় লাগে একশ টাকার এবং দানাদার খাদ্যে ব্যয় হয় আরও একশ টাকা। সবমিলে গরুপ্রতি দৈনিক দুশ বা তার অধিক টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান খামারিরা। উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের খামারি উবাইদুল মোল্যা বলেন, বিচুলি সংকটের কারণে পরিমাণ মতো খাদ্য না পেয়ে অনেক গরু হাড্ডিসার হয়ে যাচ্ছে।
ফলে গরু নিয়ে লোকসানের মধ্যে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে ভুসি ও সয়াবিন খৈলের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষা খৈল ও ভুট্টার ভুসি মূল্য। সরিষা ও ভুসি কেজিতে ২ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে চালের গুঁড়াসহ বিভিন্ন দানাদার গো-খাদ্যের দামও লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। এ ছাড়াও গুটিকয়েক লোকের কাঁচা ঘাসের ক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ লোক বাজার থেকে ক্রয় করা ঘাসের ওপর নির্ভর তবে সম্প্রতি তার মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।
লোকসানের আশঙ্কায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিরা। খামার টিকিয়ে রাখতে চড়া দামে বিচুলি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। শালিখা উপজেলার বুনাগাতী ইউনিয়নের দেশমুখপাড়া গ্রামের খামারি সেলিম রেজা বলেন, গরুর প্রধান খাদ্য বিচুলি ও সরিষার খৈল কিন্তু বর্তমানে দুটির মূল্যই বৃদ্ধি ফলে গরু নিয়ে বেশ সমস্যায় আছি।
তালখড়ি ইউনিয়নের ভাটোয়াইল গ্রামের অচিন্ত বিশ্বাস বলেন, বিচুলির দামবৃদ্ধি পাওয়ায় আপতত সরিষার কাকচা(খড়) খাওয়াচ্ছি তবে তা গরুগুলো খেতে চাচ্ছে না। তাই চারটি গরু নিয়ে বেশ বিপদে আছি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের সরবরাহ করা চারায় লাগানো কাঁচা ঘাস ও মাঠের আইল থেকে কাঁচা ঘাস সংগ্রহ করতে খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহারিন সুলতানা বলেন, গত মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে ধানগাছ পচে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে তবে এইটা নিয়ে কোনো কারসাজি করলে তা দমন করা হবে পাশাপাশি বোরো ধান ঘরে আসলেই এ সংকট কিছুটা কমে যাবে বলেও জানান তিনি।
কেকে/এএস