নারীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার ও সাইবার সহিংসতার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে রাজধানীতে এক তথ্যবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভয়েসেস ফর ইন্টারএকটিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ প্রকাশ’ শীর্ষক এ সভাটি ভয়েসের ‘পাওয়ার: প্রমোটিং উইমেনস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড রাইটস’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা অংশ নেন।
সভায় ভয়েসের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রমিতি প্রভা চৌধুরী গত বছর অক্টোবর থেকে ঘটে যাওয়া নারীর প্রতি অনলাইন সহিংসতার ১৩টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে বলেন, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত নারীরা সাইবার আক্রমণের প্রধান শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক মতাদর্শের চর্চা কিংবা নারীবাদী আন্দোলনে সম্পৃক্ত নারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানিমূলক আচরণ লক্ষ্য করা গেছে, যা বাস্তব জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, নারীদের আদর্শ, জীবনধারা ও পেশাগত অবস্থান নিয়ে অনলাইনে লজ্জিত করা, উদ্দেশ্যমূলক অপতথ্য ছড়ানো ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে হয়রানির শিকার করার মতো ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে।
সভায় আলোচকরা জানান, পুলিশের ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ সেন্টারে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে প্রতিকার চেয়েছেন ৬০ হাজার ৮০৮ জন নারী।
এ ছাড়া ১৮ ভাগ ফেসবুক আইডি হ্যাক, ১৭ ভাগ ব্ল্যাকমেইলিং, ৯ ভাগ ইমপার্সোনেশন, ৮ ভাগ সাইবার বুলিংজনিত সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
সরকার পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে নারীদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধের সর্বোচ্চ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ। প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওপর জোর দেন তারা।
এ ছাড়াও পুলিশের সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তারা বলেন, সামাজিক হয়রানির ভয় ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অনেকেই আইনপ্রয়োগকারীদের সাহায্য নিতে চান না। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেন না- কী করবেন বা কোথায় গেলে প্রতিকার পাবেন এবং অভিভাবক বা পরিচিতজনকেও জানাতে চান না। অন্যদিকে যে ভূক্তভোগীরা মামলা করেন, তারা সঠিক বিচার পান না, যার ফলে অনেকেই আত্মহননের মতো পথ বেছে নেন।
বর্তমানে সাইবার অপরাধীদের অন্যতম লক্ষ্য নারী। নারীর বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো, ঘৃণামূলক মন্তব্য থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বানানো আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, ভীতি প্রদর্শন, ইত্যাদির মাধ্যমে নারীকে অপদস্থ, উত্ত্যক্ত এবং সমাজে হেয় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া রয়েছে সাইবারস্টকিং বা পিছু নেওয়া, মর্ফিং (কোনো নারীর ছবি বিকৃত করা, ফেক প্রোফাইল তৈরি করা, যৌন উত্তেজক ক্ষুদেবার্তা পাঠানো), আর্থিক প্রতারণা, ই-মেইল আইডি হ্যাক করা, ইমপার্সোনেশন বা ক্যাটফিশিং (ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা), ডক্সিং (নারীর ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল, পারিবারিক তথ্য অনলাইনে ফাঁস)।
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। অনলাইন সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচারাভিযান, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো জরুরি।
তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সহজলভ্য করতে হবে এবং নারীদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
কেকে/এএম