রংপুরের পীরগাছায় বয়স্ক এবং বিধবা ভাতা করে দেওয়ার নাম করে ৫জন বিধবা মহিলার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ উঠছে আওয়ামী লীগপন্থি এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
৩ বছর আগে টাকা নেওয়া হলেও আজও ভাগ্যে জোটেনি ভাতার কার্ড কিংবা টাকা। এমনকি টাকাও ফেরত দেননি ওই ইউপি সদস্য। উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য কামাল উদ্দিনের নামে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করছেন ভূক্তভোগী ৫ জন বিধবা মহিলা।
অভিযোগে জানা গেছে, ওই ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন বিগত তিন বছর আগে তার ইউনিয়নের পঞ্চানন গ্রামের মৃত মোজাফফর আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম, মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম, নুর মোহাম্মদের স্ত্রী রীনা বেগম এবং আব্দুল আজিজের স্ত্রী ফিরোজা বেগমসহ ৫জন বিধবা মহিলার থেকে বিধবা ভাতা করে দেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা করে ২৫ হাজার টাকা নেন।
দীর্ঘদিনেরও এসব মহিলাকে ভাতা করে দেননি। ফেরত দেননি টাকাও। আজ-কাল আর ভয়ভীতি দেখিয়ে এতো দিন তাদের দমিয়ে রাখা হলেও গত ১১ ফেব্রুয়ারি উপায়ান্তর না দেখে টাকা ফেরত পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ ছাড়াও ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন রাধাকৃষ্ণ গ্রামের ১৩ জন মহিলার নিকট ভি ডাব্লিউ বি কার্ড করে দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি নির্বাচন করে হেরে গিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা, টিসিবি কার্ড এবং নলকূপ দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন কল্পনা রানী নামে এক মহিলা।
ভুক্তভোগী রহিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। দুটি সন্তানও মারা গেছে। আমি গরিব ও অসহায়। আমার ছাগল ও হাঁস বিক্রি করে অনেক কষ্টে মেম্বারকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তিন বছরেও তিনি আমার কোনো ভাতা কার্ড করে দেননি। এমনকি টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।
স্থানীয় লোকজন জানান, কামাল উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ডাঙ্গা-হাঙ্গামা, মাদক সেবনসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আরেক ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম জানান, ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ওই ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন তার কাছেও ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কার্ড করে দেননি, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা ফেরত দেবে বলে এক বছর ধরে ঘুরাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন এ প্রতিনিধির কাছে ৯ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন এবং দ্রুত টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান। তিনি আরো জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানেত চাইলে অন্নদানগর ইউনিয়নের প্রশাসক কৃষিবিদ আখতার ফারুক মিয়া বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছে, তিনিই বিষয়টি দেখবেন।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে থানার ওসিকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।
কেকে/এএস