শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
৯ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস       হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের      কর্মবিরতি স্থগিত, একুশে ফেব্রুয়ারি চলবে মেট্রোরেল      জামায়াত আমিরের স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা      অনিশ্চিয়তায় না রেখে দ্রুত নির্বাচন দিন: মির্জা ফখরুল       দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার      হৃদয়ের বীরত্বগাথা সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ের পুঁজি পেল বাংলাদেশ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
আন্দোলনে ক্লান্ত ঢাকা
খোলা কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৩০ এএম আপডেট: ১৭.০২.২০২৫ ১০:৩২ এএম  (ভিজিটর : ৮৭)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের চিত্র। নানা দাবিতে কথায় কথায় চলছে সড়ক অবরোধ। কোথাও কোথাও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাও এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কারো দাবি চাকরি স্থায়ীকরণ, কেউ চান সরকারিকরণ। বদলি নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন। ঢাকার কাঁধে এখন শুধু আন্দোলনের চাপ। দাবির ইস্যুতে ক্লান্ত ঢাকা। আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগ ব্যানারে লেখা বঞ্চিত আর বৈষম্যের শিকার জাতীয় শব্দ। 

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের অধিক সময়ে সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ বা হতাহতের ঘটনাও কম ঘটেনি। মাঝখানে কিছুটা বিরতি থাকলেও সম্প্রতি ঘনঘন সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে। শুধু রাজপথের আন্দোলনই নয়, দীর্ঘ ১৫ বছরের বঞ্চিত বলে দাবি-দাওয়া আদায়ে অবস্থান-অনশন হয়েছে সচিবালয়সহ সরকারি অফিসেও। এমএলএসএস থেকে শুরু করে বাদ যায়নি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও। 

গত এক মাসে আন্দোলন হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক। এসব আন্দোলন-বিক্ষোভ আর সড়ক অবরোধে প্রতিনিয়ত স্থবির হয়ে পড়ছে ঢাকা শহর, সীমাহীন দুর্ভোগে নগরবাসী। এতে বিপর্যস্ত, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ তারা। সরকার শুরু থেকে যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের অধিকারকে সমর্থন করলেও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন না করতে বারবার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! লাগাম টানা যাচ্ছে না বহুমুখী আন্দোলনের। ফলে ভোগান্তির শেষ নেই ঢাকাবাসীর। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে কেউ দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে নামতে পারত না। পুলিশের লাঠিচার্জ-গুলি, পাশাপাশি হেলমেটবাহিনীর তাণ্ডবে আন্দোলন থমকে যেত। মানুষ এখন কথা বলতে পারছে। ফলে তারা চাইছে আন্দোলন করে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে। এতে করে যানজটে স্থবির সড়কে আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অফিস শেষে হেঁটে বাসায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন লাখো মানুষ। তবে রাজপথ চলমান রাখতে আন্দোলন ইস্যুতে উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সেল গঠন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। 

এদিকে নতুন করে সিএনজিতে মিটার পদ্ধতিতে ভাড়া বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে সিএনজি চালকরা। এর ফলে সকাল-সকাল অকার্যকর হয়ে পড়ছে ব্যস্ত নগরী ঢাকা। বাস বা অন্য কোনো পরিবহন চলাচল করতে না পারায় দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে অবর্ণীয় জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। 

গতকাল রোববার সকালে রাস্তায় নেমে মানুষ হঠাৎ করেই অটোরিকশা ধর্মঘটের কথা জানতে পারে। রাস্তায় অটোরিকশা চলছে না, সেটা একটা সমস্যা। কিন্তু সমস্যাটা অনেক বড় হয়ে দাঁড়াল যখন অটোরিকশা চালকরা ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করতে শুরু করলেন। 

তাদের অবরোধের কারণে ঢাকার দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও গাবতলী দিয়ে যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঢাকার আশপাশের জেলা নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে রাজধানীতে প্রবেশে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এসব জেলার অনেকেই বাড়ি থেকে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন। শহরের ভেতরেও শনিরআখড়া, দোলাইপাড়, গোলাপবাগ, ডেমরা, বাসাবো, রামপুরা, কলেজগেট, আগারগাঁও, মিরপুর, মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন অটোরিকশা চালকরা। তাতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় বিভিন্ন সড়কে। ভোগান্তিতে পড়েন চলতিপথের যাত্রীরা। শনিরআখাড়ায় বাধা পেয়ে বাস থেকে নেমে পড়েন দূরপাল্লার অনেক বাসযাত্রী। হেঁটেই তারা গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। 

আন্দোলনকারীরা বলছেন, মিটারের ভাড়া বৃদ্ধি এবং মিটারে না চললে জরিমানার আইন বাতিল করতে হবে। বিআরটিএ এ সিদ্ধান্ত বাতিল না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। 

সিএনজিচালক বাবু বলেন, মিটার পদ্ধতিতে ভাড়া চাই না। মিটার থাকলে পুলিশ, পাবলিক এবং মালিকের অত্যাচার চলতে থাকে। মিটার মানেই যন্ত্রণা। আমিরা চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় গাড়ি চালাতে চাই। মিটার থাকলেই পুলিশের ধান্দা হয়। আরেক সিএনজিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ মামলা বড়জোর ২ থেকে ৩ হাজার হলে ভালো হতো। তা-ও বেশি হয়ে যায়। সরকার ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আইন করেছে এবং অনাদায়ে ৬ মাসের জেল। এ আইন আমরা মানি না। এ আইনের ফলে চালকরা ভয়ে গাড়ি চালায়। আরেক চালক নূর আলম বলেন, একবার দুই হাজার টাকার মামলা না ভাঙালে পরেরবার চার হাজার টাকার মামলা দেয়। গ্যাস, জমা, রাস্তার খরচ দিয়ে আমরা বউ-পোলাপান নিয়ে চলতে পারি না। 

গণপরিবহন না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন হৃদয় আহমেদ। তিনি বলেন, ঢাকা এখন দুর্ভোগ আর আন্দোলনের নগরী। কিছু হলেই আন্দোলন। আমাদের তো জীবন নেই। সাধারণ মানুষ এ দেশের জন্য বোঝার মতো, কিছুই বলার নেই। ফয়সাল নামের আরেক পথচারী বলেন, সেই ৮টায় বের হয়েছি। এখনো রামপুরায় আটকা। বাধ্য হয়ে হেঁটে অফিসে যাচ্ছি। এ দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। 

বেলা সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কয়েকটি বাস সার্ভিস লেইন দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যেতে পারলেও বেশিরভাগ যানবাহন আটকে পড়ে। সার্ভিস লেন দিয়ে যে অল্প কিছু গণপরিবহন চলাচল করেছে, সেগুলোও ছিল যাত্রীতে ঠাসা। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদের কাউকে কাউকে দূরপাল্লার বাস থামিয়ে গুলিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। সেখানে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী রুমিয়া খাতুনের সঙ্গে। 

হাসপাতালের আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তিনি কাজলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন দীর্ঘ সময়। নার্সদের সঙ্গে আয়া হিসেবে কাজ করা রুমিয়া বলেন, ‘দ্যাখেন তো কোনো বাস নাই। যাও আসে দুয়েকটা, ক্যামনে উঠুম। ডিউটিতে যামু গাড়ি পাইতাছি না।’ 

পরে চানখাঁরপুলগামী একটি দূরপাল্লার বাসের সহকারীকে অনুরোধ করে কোনোমতে উঠে বাসের সবচেয়ে নিচের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে যান তিনি। যাত্রাবাড়ী, কাজলা থেকে গুলিস্তান যাওয়া নিয়মিত যাত্রীদের অনেকই উড়াল সড়কে উঠে হেঁটে গুলিস্তানে যান ঝুঁকি নিয়ে। 

ঢাকার বনানীতে অফিসে যোগ দিতে গতকাল সকাল ৭টায় নারায়ণগঞ্জ সদরে আসেন নাইমুর রহমান। বেসরকারি এ চাকরিজীবী বলেন, ‘ঢাকায় থাকি, সপ্তাহের বন্ধের দুই দিন নারায়ণগঞ্জ যাই। সকালে ৭টায় গাড়ি ধরলাম, চিটাগাং রোড পর্যন্ত আইসা আর গাড়ি আগায় না। একটা ঘণ্টা বইসা থাকলাম।’ তিনি বলেন, ‘প্রতি রোবাবর দুই ঘণ্টা হিসাব কইরা বাহির হই বনানী যাইতে। ওই সময়ে রাস্তা ফাঁকা থাকে। ৯টায় অফিসে থাকার কথা। এহন সাড়ে ১০টা বাজে কেবল আইলাম গুলিস্তান।’ 

অটোরিকশাচালকদের অবরোধে কষ্টের কথা ফেসবুক গ্রুপ ট্রাফিক অ্যালার্টে লিখেছেন আরিফ হোসেইন। হাতিরঝিলের একটি অংশ আটকে দেওয়ার ছবিও তিনি শেয়ার করেছেন। একই গ্রুপে রাজধানীর আসাদ গেট এলাকার ভিডিও দিয়ে রুশো হাসান জয় লিখেছেন, শ্যামলী, কলেজ গেটের দিকে আসতে চাইলে সময় নিয়ে বের হতে হবে। কারণ আসাদ গেট মোড় আটকে দিয়েছেন অটোরিকশাচালকরা। 

গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকেই আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া নানা দাবিতে রাজধানীর ১৭টি পয়েন্টে চলে অবরোধ, আন্দোলন। কারো দাবি চাকরি স্থায়ীকরণ, কেউ চান সরকারিকরণ-বদলি নিয়োগসহ নানা ইস্যু। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের আন্দোলন চলে টানা ৯ দিন। দিনের বিভিন্ন সময়ে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করে রাখেন তারা। এরপর আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। 

এর আগে, আন্দোলনে আহতেরা একই দাবিতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে। এতে করে শ্যামলী থেকে আগারগাঁও সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

ঢাকাতে আন্দোলন ও ব্যাপক যানজটের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক অবস্থা খুবই নাজুক। মানুষ খুবই কষ্ট করছে। আমার নিজেরও কষ্ট লাগে। যখন দেখি মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকে। ছোট একটা দাবি নিয়ে বিশজন লোক রাস্তা আটকে দেয়। আমি তাদের বলব আপনারা ছোট দাবি নিয়ে রাস্তা আটকায়েন না। আপনারা ফুটপাতে অবস্থান করুন। কিন্তু খুবই দুঃখজনক যে কোনো দাবি-দাওয়ার মোক্ষমস্থল হয়ে গেছে রাস্তা অবরোধ।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে নারীসহ গ্রেফতার ৪
শরীয়তপুরে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচি
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের

সর্বাধিক পঠিত

দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার
অযত্ন অবহেলায় রৌমারীর প্রথম শহিদ মিনার
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
কাপাসিয়ায় গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝