মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫,
৯ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: বাজারে বাণিজ্য উপদেষ্টার মনোযোগ বাড়াতে হবে: ইসলামী আন্দোলন      কোনো অভ্যুত্থান বা বিপ্লব ৩৬ দিনে হয় না: রুমিন ফারহানা      সিভিল ড্রেসে আসামি ধরতে পারবে না পুলিশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি      আমরা এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ দরিদ্র থাকবে না: ড. ইউনূস      দেশের ভূখণ্ডে আরকান আর্মি, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন      শীর্ষ পর্যায়ে পদ পাচ্ছে স্বৈরাচারের দোসররা       
গ্রামবাংলা
ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা পাড়ে মানুষের ঢল
সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
প্রকাশ: সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:০৩ পিএম  (ভিজিটর : ১৩৯)
তিস্তার ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি | ছবি: প্রতিনিধি

তিস্তার ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি | ছবি: প্রতিনিধি

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ এই স্লোগানে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গাইবান্ধাসহ উত্তরের পাঁচ জেলায় চলছে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধার তিস্তাপাড়ে হাজারো মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন এই কর্মসূচিতে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টসহ পাঁচ জেলার ১১ স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের কৃষক, জেলে, মাঝি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আয়োজকদের দাবি, সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত হয়।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্ট

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্ট


তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘তিস্তা রংপুর অঞ্চলের জীবনরেখা। কিন্তু বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকটে দুই তীরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। ন্যায্য পানির হিস্যা ও মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি। সরকার যদি দ্রুত দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অন্যতম সমন্বয়ক মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘তিস্তা আমাদের জীবন-জীবিকার অংশ। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আবাদ করতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা নৌকা চালানোর কাজ হারাচ্ছেন। তাই সবাই মিলে ন্যায্য পানির দাবিতে তিস্তাপাড়ে অবস্থান নিয়েছি। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আন্দোলন আরও ব্যাপক হবে।’

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার পানি না থাকায় কৃষকরা সেচ দিতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা নৌকা চালাতে পারছেন না। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

হরিপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের জমি বালুচরে পরিণত হয়েছে। পানি না থাকায় ফসল ঠিকমতো ফলাতে পারছি না। ধান লাগাই, কিন্তু সময়মতো সেচ দিতে না পারায় ফলন কমে যাচ্ছে। এইভাবে আর কতোদিন চলবে? সরকার দ্রুত তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে উদ্যোগ নিক।’

রাঘব গ্রামের জেলে মোবারক আলী বলেন, ‘একসময় তিস্তায় প্রচুর মাছ ছিল, আমরা মাছ ধরেই সংসার চালাতাম। এখন নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা চাই তিস্তা বাঁচুক, তিস্তার পানি ফিরে আসুক।’

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, তিস্তার পানির জন্য লড়াই চলছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীটা বালির মাঠ হয়ে যায়, বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা আঘাত হানে। তিস্তা যদি বাঁচে, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। আমরা চাই সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিক।’

ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিস্তা বাঁচলে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়বে। নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পরিবহন, কৃষি, মৎস্যসহ সবকিছুতেই ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসার জন্য ভালো পরিবেশ দরকার, আর তার জন্য তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।’

এ কর্মসূচিকে আরো প্রাণবন্ত করতে সাংস্কৃতিক ও গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। পালাগান, সারিগান, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, লোকসংগীতের পাশাপাশি হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

একসময় তিস্তা ছিল প্রাণের স্রোত, কিন্তু এখন ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। বর্ষায় উজানের পানিতে দুই তীর ভেঙে হাজারো পরিবার নিঃস্ব হয়, আবার শুষ্ক মৌসুমে ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণের ফলে তিস্তার বুক ধূ ধূ বালুচরে পরিণত হয়। ফলে কৃষকরা আবাদ করতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা জীবিকা হারাচ্ছেন।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শুধু নদীই বাঁচবে না, বরং এই অঞ্চলের অর্থনীতিও চাঙা হবে। তাই তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের একটাই দাবি—‘সরকার দ্রুত উদ্যোগ নিক, তিস্তা যেন অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হয়।’

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  ন্যায্য হিস্যা   তিস্তা নদী   মানুষের ঢল     
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাঝে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
বাজারে বাণিজ্য উপদেষ্টার মনোযোগ বাড়াতে হবে: ইসলামী আন্দোলন
ফুলবাড়ীতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতা গ্রেফতার
সালথায় দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার
কিশোরগঞ্জে দাখিল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, গ্রেফতার দুই

সর্বাধিক পঠিত

খোলা কাগজে সংবাদ প্রকাশের ৫ ঘণ্টার মধ্যে কোটি টাকা ফেরত দিলেন মেয়র
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ, গ্রেফতার অভিযুক্ত
বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে হার্ট অ্যাটাকে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু
শ্রীমঙ্গলে ‘তথ্য কেন্দ্র ও ব্রেস্ট ফিডিং রুম’ এর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন
ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে থানা ঘেরাও, বিক্ষোভকারীদের ওপর বিএনপির হামলা

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close