প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা মানেই শোষণের শিকার। আগের সরকার সকল সিকিউরিটি ফোর্স দিয়ে আমাদের অধিকার হরণ করেছে। আমি ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ফ্যান।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আজকে আমার ভালো লেগেছে যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে। এই আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণ আছে। একজন মানবাধিকারকর্মী বলেছে ঢাকার বাইরে কিসের আন্দোলন হয়েছে? এই ডকুমেন্টারিগুলো তার প্রমাণ। আমি দেখেছি আন্দোলনে অনেক মেয়েরা অংশগ্রহণ করেছে, সামনে আসছে। কী অভূতপূর্ব আন্দোলন। সেই অনুযায়ী যদি নব্বইয়ের আন্দোলন দেখেন আপনি খুব কম মেয়ে পাবেন। বাংলাদেশের এই আন্দোলন নিয়ে ইন্ডিয়ার মিডিয়া অনেক আজেবাজে কথা লেখে। আমার মনে হয় এই ডকুমেন্টারিগুলো ইন্ডিয়ার মিডিয়ার জন্য চপেটাঘাত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কুবিসাস’র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান। বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আপনাদের স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে হবে। লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিকতা থেকে বের হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো অন্যায়ের পাশাপাশি ভুলভ্রান্তিও তুলে ধরতে হবে। এমন কি আমার ভুলগুলোও তুলে ধরবেন। আমি এটাই চায়। আমি ৬ মাস ক্যাম্পাসে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভালো ও মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থী থাকার পরেও এই বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সরকারি হিসেবে ২য় গ্রেডে রয়েছে। সেটা খুবই দুঃখজনক। আমি সাংবাদিকদের বলবো বিশ্ববিদ্যালয় কেন ২য় গ্রেডে গেল সেই রহস্য উদঘাটন করা হোক।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, সাংবাদিকতা আমাদের সমাজের দর্পন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অথরিটি ও রেসপনসেবলিটি নিশ্চিত হয় জবাবদিহিতার মাধ্যমে এবং সাংবাদিকেরা এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন। আমি আপনাদের নৈতিকতা ঠিক রেখে নিউজ করতে বলবো। মেধা ও মননের সমন্বয়ে কাজ করতে বলবো। সর্বশেষ কুবিসাসের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও তারা জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে কুবিসাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজ জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তারা। পড়াশোনার পাশাপাশি পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তাসনিম খলিল বলেন, আজকে দায়িত্ব হস্তান্তরে আগের নেতৃবৃন্দ সরে যাবেন নতুন আপনারা আসবেন। আপনারা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেতৃত্ব নিচ্ছেন। একযুগ বাংলাদেশে কোনো স্বাধীন সাংবাদিকতা ছিলো না। আপনারাই প্রথম নেতৃত্ব যারা নতুন করে স্বাধীন বাংলাদেশে, স্বাধীন গণমাধ্যম সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার উর্বর ক্ষেত্র হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আপনারা অনেকে বিভিন্ন স্থানীয় মিডিয়া বা জাতীয় মিডিয়ায় প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত আছেন। আপনারা স্বাধীন গণমাধ্যম চর্চা নিশ্চিত করবেন। আপনারা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সেহেতু আপনারা শিক্ষার্থীদের সকল স্বার্থ নিয়ে কথা বলবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি মো.শফিউল্লাহ ও জাহিদুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলার মাই টিভির প্রতিনিধি আবু মুসা, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের তানভীর দীপু, সময় টিভির ইসতিয়াক আহমেদ, এসএ টিভির রফিকুল আলম, দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি মাহফুজ নান্টু, চ্যানেল আইয়ের জাহিদুল আলম, এখন টিভির খালেদ সাইফুল্লাহ, আমার দেশের প্রতিনিধি এম হাসান, প্রতিদিনের সংবাদের মারুফ আহমেদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন ও সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ, শিবির সভাপতি ইউসুফ ইসলাহীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
কেকে/এজে