তিস্তার পানির
ন্যায্য হিস্যা, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে 'জাগো বাহে তিস্তা
বাঁচাই' এই স্লোগানে তিস্তা পাড়ে রংপুর বিভাগের ৫ জেলার তিস্তার চরের ১১
টি স্থানে লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছে। লালমনিরহাট জেলায় তিস্তার ৬৭
কিমিতে ৫টি পয়েন্টে হাজার হাজার মানুষ নিজের বাড়ি থেকে চাল,ডাল এনে নিজে
রান্না করে খেয়ে কাথা কম্বল নিয়ে পানিশূন্য নদীর বালুতে রাতযাপন করেছে।
সোমবার
(১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, নিজের রান্না করা খিচুড়ি
খেয়ে উৎসক জনতা তিম্তা পাড়ে সারারাত গল্প,গান বাজনা করে সারারাত কাটিয়েছে
আবার কেউ নিজের বাড়ি থেকে আনা কম্বল আর বালিশ বালু চরে তাবুর মধ্যে বিছানায়
ঘুমিয়ে পড়েছে। এভাবে ১ম দিনের নানা কর্মসূচির রাত কাটিয়ে ২য় দিনের
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে।
এর আগে গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এদিন একসঙ্গে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম,
নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টের সমাবেশে দীর্ঘ নদী
পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্থানে মঞ্চ তৈরি করা হয়।
পদযাত্রা,
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। টানা ৪৮
ঘণ্টার এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর।
হাজার,হাজার মানুষ স্বতস্পর্তভাবে সারাদিন আলোচনা সভা,
তিস্তা পাড়ের মানুষের সুখ দুঃখের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ভাওয়াইয়া
গানের আসর, ঘুড়ি উৎসবসহ নানান গ্রামীণ খেলাধুলা,নাটক,লোকজ গান শেষে, বালু
চরে বিছানা পেতে রাত্রি যাপন করে।কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার বুকে মঞ্চ
তৈরি, খাবার ব্যবস্থা, তাঁবু টানিয়ে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক, মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী, চিকিৎসক থেকে
শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা এক কাতারে সামিল হয়েছেন শুকিয়ে
যাওয়া তিস্তাকে রক্ষার দাবিতে হাজার মানুষের রাত্রিযাপনের প্যান্ডেল,
সমাবেশ ও বিনোদনের জন্য মঞ্চ তৈরী, পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন
ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ স্থাপনসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা
হয়েছে।
তিস্তায় ৪৮ ঘন্টা অবস্থান করতে আসা শাহ আলম বলেন, নদী
ভাঙনে সব আবাদি কৃষিজমি বিলীন হয়ে গেছে কয়েকবার বাড়ি সরাতে হয়েছে, মহা
পরিকল্পনা হলে সব জমিতে আবাদ হবে,আগে অনেকবার মহাপরিচালক হবার কথা শুনলেও
বাস্তবায়নের করতে পারেনি বিগত সরকার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে
দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
তিস্তা
নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপির সাংগঠনিকসম্পাদক
অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু জানান, তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন
কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোন রাজনৈতিক দলের নয়। এটি রংপুর বিভাগবাসীর
আন্দোলন। ৪৮ ঘন্টার কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার চরে হাজার হাজার মানুষ
তাবুতে বিছানা বিছিয়েছে। তাদের সকলের দাবি তিস্তা মহা পরিকল্পনা
বাস্তবায়ন করতে হবে। তিস্তার করাল গ্রাস থেকে এই অঞ্চলের মানুষ মুক্তি
চায়।
অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে নিলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট,
কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ
১১টি স্থানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। শেষদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচিতে থাকবে
তিস্তা ব্রীজ থেকে কাউনিয়া পদযাত্রা, তিস্তার নদীর পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড
প্রদর্শন, সঙ্গীতানুষ্ঠান,পালা গান, বিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য ও ডকুমেন্টারী ভিডিও প্রদর্শন।
শেষে সঙ্গীতানুষ্ঠান ও সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে তিস্তার ৪৮ ঘন্টাব্যাপী
কর্মসূচি সমাপ্তি হবে।
কেকে/এআর