শ্যামনগরের আলোচিত কথিত পির মো. মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে শ্যামনগর থানা পুলিশ।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে নিজ আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সহযোগী ও জামাতা মো. আবু নাইমকেও গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে প্রতারণাসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে শ্যামনগরের শংকরকাঠি গ্রামের সিদ্দিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মিজানুর রহমান শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট অন্তাখালী গ্রামের মৃত দীনদার গাজীর ছেলে। আবু নাইম শরীয়তপুরের সখিপুর থানার মোল্যাবাজার গ্রামের নুরুল হুদার ছেলে।
নিজেকে আল্লাহ পাকের কুতুব ও ওলি দাবি করে মানুষের অন্তঃচক্ষু খুলে দেওয়ার নামে অসংখ্য মানুষের থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মিজানকে ভণ্ড আখ্যায়িত করে গত শুক্রবার তার আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে কয়েকশ মানুষ আস্তানা অভিমুখে পদযাত্রা করেছিল। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা পথিমধ্যে উত্তেজিত জনতাকে আটকে দিলে সে যাত্রায় তার আস্তানা ভাঙচুর থেকে রক্ষা পায়। এ সময় উপজেলা ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ মিজানকে আইনের আওতায় আনতে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
মামলার বাদী সিদ্দিকুল ইসলাম জানান মিজানের নির্দেশনায় তার জামাতা আবু নাইম শরীয়তের মানদণ্ডে ওলিগণের হালত নামীয় একটি বই প্রকাশ করে। উক্ত বাইয়ের বিভিন্ন অংশে আল্লাহ পাক ও তার রাসুল (স.) এর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান গত ২০১৬ সালে প্রকাশিত উক্ত বইয়ে দাবি করা হয়েছে আল্লাহ পাকের সঙ্গে মানুষের কথা হয়, বান্দার ইচ্ছায় আল্লাহ পাক অনেক সময় নিজের হুকুম পরিবর্তন করেন- এ নানান শিরকমূলক উক্তি।
তিনি আরো অভিযোগ করেন নিজেকে ক্রস ফায়ারের আসামি দাবি করে মিজান আরো অনেকের মতো তার নিকট থেকে তিন লাখ টাকা ধার নেন। পরবর্তীতে টাকা চাইলে ‘মাওলা দিচ্ছে না’ জানিয়ে টালবাহানা শুরু করে পরবর্তীতে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
এদিকে মিজান একজন প্রতারক দাবি করে তাকে আইনের আওতায় নেওয়ার আহবান জানিয়ে সোমবার দুপুরের দিকে শ্যামনগর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন হয়। মিজানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন দাবি করে চাঁদপুর জেলার মহামায়া বাজারের বেলায়েত হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন, শরীয়তপুরের সখিপুর থানার মাঝিকান্দি গ্রামের মৃত বশির আহম্মেদের ছেলে জাফর আহম্মদ ও ঢাকা পল্লবীর রুপনগর টিনশেড এলাকার মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে আব্দুল হালিম সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবীর মোল্যা জানান সিদ্দিকুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলার আসামি হিসাবে মিজানুর রহমান ও আবু নাইমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবু নাইমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘শরীয়তের মানদণ্ডে ওলিগণের হালত’নামীয় বইয়ের মাধ্যমে মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এদিকে ‘ভণ্ড’ পীর মিজানকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্যামনগরে আনন্দ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ।
কেকে/এএস