‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’—এই স্লোগানে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল তিস্তা পাড়। আন্দোলনকারীরা পালাগান, ভাওয়াইয়া ও লোকসংগীতের সুরে তুলে ধরছেন তাদের আকুতি—‘তিস্তা বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আন্দোলন আরো বেগবান হয়েছে। সকাল থেকেই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টসহ ১১টি স্থানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে তিস্তা বাঁচানোর বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।
সংগীতের শক্তিকে আন্দোলনের ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়ে আন্দোলনকারীরা জানান, ‘সংগীত শুধু বিনোদন নয়, এটি প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যম। আমরা গানের মাধ্যমে তিস্তা পাড়ের দুঃখ-কষ্ট, বঞ্চনার কথা তুলে ধরছি, যেন সবার হৃদয়ে নাড়া দেয়।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সুরের মূর্ছনার পাশাপাশি চলছে আলোচনা সভা। এতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের জীবন-জীবিকার অংশ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখি, তিস্তা শুকিয়ে যাচ্ছে, কৃষকরা আবাদ করতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা নৌকা চালানোর কাজ হারাচ্ছেন। তাই আমরা ন্যায্য পানির দাবিতে মাঠে নেমেছি।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ বলেন, ‘তিস্তা পাড়ের মানুষ বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত। তারা বর্ষায় বন্যায় সর্বস্ব হারায়, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে দুর্ভোগে পড়ে। অথচ সরকার একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমরা তিস্তা পাড়ের মানুষের এই আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি এবং তাদের পাশে আছি।’
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, ‘তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, কৃষি ও সংস্কৃতির অংশ। ভারত একতরফাভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে যায়, বর্ষায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা পাড়ের মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অথচ সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা মনে করি, তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।’
আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে তিস্তা পাড়ের মানুষ বঞ্চনার বিরুদ্ধে গানের সুর তুলেছে। পালাগান, সারিগান, ভাওয়াইয়া ও লোকসংগীতের পাশাপাশি গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা আন্দোলনকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাদের দাবি, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক, নইলে বৃহত্তর কর্মসূচি নেওয়া হবে।
কেকে/এএস