২৩ বছর পর পরিবার ফিরে পেলেন কুমিল্লার জোসনা। বাবাকে না জানিয়ে দূর সম্পর্কের চাচার মাধ্যমে রাজধানী এক বাসায় ২৩ বছর আগে কাজ করতে যান অভাবের সংসারে জন্ম নেওয়া পাঁচ বছর বয়সী শিশু জোসনা। ঠিকমতো কাজ করতে না পাড়ায় মারধর করত ওই বাসার লোকজন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একাই ওই বাসা থেকে দুই মাসের মাথায় বের হয়ে যায়। পরে তিনি হারিয়ে যান। পরিবারও তাকে আর খুঁজে পাননি।
জোসনা বড় হন অন্য এক পরিবারে। পরিবারটি তাকে বিয়েও দিয়েছেন। স্বামী ও ইয়াসিন নামে একটি ছেলে সন্তান নিয়ে তিনি এখন গাজীপুরের দক্ষিণ সালনা এলাকায় বসবাস করছেন। পরিবার হারনোর বেদনা বুকে চেপে হারিয়ে ফেলা পরিবার খুঁজে পেতে চেষ্টাও চালিয়ে ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে কেটে গেছে ২৩ বছর। অবশেষে আরজে কিবরিয়ার উপস্থাপনায় একটি অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’র মাধ্যমে হারিয়ে ফেলা পরিবার ফিরে পেয়েছেন জোসনা।
জোসনা কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের ছাতিয়ানী এলাকার মো. আবুল হাসেমের মেয়ে। বর্তমানে জোসনার স্বামী শহীদুল ইসলাম একটি প্রজেক্টে আর জোসনা একটি পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি করছেন।
স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের নির্মাণে ইউটিউব চ্যানেল ‘আপন ঠিকানায়’ আপলোড করা ভিডিওতে দেখা যায়, দীর্ঘ ২৩ বছর পর মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন জোসনা।
দীর্ঘ সময় পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলনের আবেগঘন এ দৃশ্য আপ্লুত করেছে নেট দুনিয়ার প্রায় লাখও দর্শককে। ভিডিওটি ইউটিউব চ্যানেল ‘আপন ঠিকানায়’ গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রচার করা হয়।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি আপন ঠিকানায় জোসনা তার হারিয়ে যাওয়ার করুণ গল্প তুলে ধরেন। তারপর থেকে জোসনার দেওয়া আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে আপন ঠিকানা কর্তৃপক্ষ জোসনার পরিবার খোঁজার কাজে ওঠে পড়ে লাগেন এবং অবশেষে জোসনার হারিয়ে যাওয়া পরিবার খুঁজে বের করেন।
জোসনা বলেন, ছোটবেলায় এক চাচার সঙ্গে আমার বাবাকে না জানিয়ে আমার মা আমাকে ২০০২ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় কাজে দেন। সেখানে আমি ঠিকমতো কাজ করতে পারতাম না বলে তারা আমাকে মারধর করত। এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একদিন একাই বাড়ি চলে যেতে পারব ভেবে ওই বাড়ি থেকে বের হই। বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আমি চিন্তায় পড়ে যাই কীভাবে বাড়ি যাব? আমি তো চিনি না। কোথায় আমাদের বাড়ি? সবমিলিয়ে আমি ভয় পাই।
এ সময় সড়ক দিয়ে একজন মহিলা হেঁটে যাচ্ছিলেন, আমি উপায়ান্তর না দেখে ওই মহিলার পেছনে হাঁটা শুরু করি। ওই মহিলা প্রথমে আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে ওই মহিলার কাছেই বছরখানেক থাকতে পারি। তারপর তারা আমাকে অন্য একটি পরিবারের হাতে তুলে দেন। সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারিনি। তারাও আমাকে আরেকটি পরিবারের হাতে তুলে দেন। অবশেষে ওই পরিবারেই আমি বড় হই। তারা আমাকে বিয়েসাদী দিয়ে দেন। বর্তমানে আমার স্বামী ও একটি ছোট ছেলে রয়েছে।
জোসনা আরো বলেন, মা-বাবার পরিচয় ছিল না বলে অনেকভাবে আমাকে অনেক কটুকথা শুনতে হয়েছে। মা-বাবার পরিচয় না থাকায় পড়াশোনা করতে পারিনি। দেশের নাগরিকও হতে পারিনি। আপন ঠিকানার কর্তৃপক্ষসহ আমার হারিয়ে যাওয়া পরিবার খোঁজায় যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আমার অফিসের শামীম ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কেকে/এএম