শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
৯ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস       হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের      কর্মবিরতি স্থগিত, একুশে ফেব্রুয়ারি চলবে মেট্রোরেল      জামায়াত আমিরের স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা      অনিশ্চিয়তায় না রেখে দ্রুত নির্বাচন দিন: মির্জা ফখরুল       দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার      হৃদয়ের বীরত্বগাথা সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ের পুঁজি পেল বাংলাদেশ      
শিক্ষা
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক
বিগত সরকারের মতো নতুন বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদী প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম আপডেট: ১৮.০২.২০২৫ ১০:৫৯ পিএম  (ভিজিটর : ৭২)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস: কেমন আছে দেশ ও শিক্ষাঙ্গন?’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।  এ সেমিনারের বিষয়বস্তু তিন পর্বে উপস্থাপন করা হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক পরিস্থিতি এবং বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তাব ও দাবি উত্থাপন করা হয়।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, অভূতপূর্ব জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা ও ব্যাধিগুলোকে চিহ্নিত ও সনাক্ত করে, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে একটি সফল ও বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ আমাদের সামনে এনেছিল। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা দুঃশাসনের পর যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি, ঠিক তখন ট্যাগিংয়ের বিভেদমূলক রাজনীতিকে ব্যবহার করে দেশব্যাপী সহিংসতা, বল প্রয়োগ, মব-সন্ত্রাস, তথ্য গোপন ও কণ্ঠরোধ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নেওয়াসহ বহুবিধ উপায়ে নতুন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসেছে। 

আরো জানানো হয়, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হচ্ছে না। দুঃখজনক হলো, তারা আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের হোতা এবং জড়িতদের বিচারের তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। উপদেষ্টারা বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার বহির্ভূত কথাবার্তা বলছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের তদন্ত দল জানিয়েছে, কতিপয় রাজনৈতিক দল জুলাই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজে তাদের সহযোগিতা করেনি। গুম-কারখানা আয়নাঘরের রহস্য উন্মোচনে আরও বেশি রহস্য তৈরি করা হয়েছে এবং এর কুশিলবদের রক্ষার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টার ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনকালে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কেবল দুটি গণমাধ্যম ও কয়েকজন ভুক্তভোগী ছাড়া কাউকে না নেওয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। 

পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ লেখা একটি গ্ৰাফিতি সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে, আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে, ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামে একটি সংগঠন নৃশংস কায়দায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ভিন্নমতকে দমন করার এই সহিংস কৌশল বিগত সরকারও ব্যবহার করেছিল। তখনও হামলাকারীরা রাজনৈতিক রক্ষাকবচ ব্যবহার করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেত, এখনও সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি আমরা দেখছি।

ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে লালন মেলা বন্ধ করে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকার উত্তরাতে বসন্ত উৎসব পণ্ড করেছে, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত নাট্যোৎসব। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, প্রতিটি ঘটনাতেই প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, উল্টো ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের ‘সরকারি প্রতিনিধি’ হিসেবে এই আয়োজনগুলো থামিয়ে দিয়েছে। আবার, কোথাও কোথাও হামলার আশঙ্কায় আয়োজকরা পিছিয়ে গিয়েছেন। এছাড়া, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার ভাস্কর্য ও সুনামগঞ্জে কৃষকের ভাস্কর্যসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি ভাঙা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বাসাবাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হচ্ছে। আর মন্দির, মাজার, দরগাহর ওপর আক্রমণের হুমকি তো আছেই!

ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিগত আমলে ঠিক যেভাবে আমলাতন্ত্র এবং সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে নিজেদের হাত শক্তিশালী করছিল, নতুন বাংলাদেশেও সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। দায়িত্বশীল পদগুলোতে বেসামরিক ও সামরিক বাহিনী থেকে আগত আমলাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লক্ষণীয়। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির নামে এই গোষ্ঠীতন্ত্রকে আরো জোরদার করা হচ্ছে। গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয় বলেই, নিয়োগের সুপারিশ প্রকাশের পরও গ্ৰহণযোগ্য ব্যাখ্যা ছাড়াই ২৫২ জন এসআইয়ের নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার, যারা এই সরকারের আমলেই নিয়োগপ্রাপ্ত। বাতিল করা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্তদের চাকরি। 

বঞ্চিতরা দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে এলে সেই একই রকম মারমুখী পুলিশকে দেখতে পাচ্ছি। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আমলে না নিয়ে তাদের নির্যাতন ও হত্যা করেছে পুলিশ। পাহাড়ে সেনা সমর্থিত আক্রমণে নিহত হয়েছেন আদিবাসীদের সন্তান। ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ করেছে পুলিশ। সরকার যেকোনো আন্দোলনে ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছে অথচ আন্দোলনকারীদের রাস্তায় নামার কারণটি বিবেচনা করছে না; বিগত সময়ের মতোই জুলুমবাজি করছে। এ ধরনের পুলিশী হামলা প্রমাণ করে বাংলাদেশ এখনো একটি দমনমূলক পুলিশী রাষ্ট্রই রয়ে গেছে।

বইমেলায় প্রকাশক আক্রান্ত হচ্ছেন, কবি আক্রান্ত হচ্ছেন নিজের মত প্রকাশের জন্য, আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পুলিশ বরং আক্রান্তকেই হেফাজতে ও রিমান্ডে নিয়ে যাচ্ছে। যৌথবাহিনীর হাতে আটক ব্যক্তি হেফাজতে থাকাকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছেন। অথচ, পুলিশের কাজ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 

এসব খণ্ডচিত্র আমাদের সামনে একটি সামগ্রিক উগ্র ও অসহিষ্ণু চিত্রও উপস্থাপন করে। গোটা দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং ‘মব’ হিসেবে পরিচিত (অ)সরকারি বাহিনী সঙ্ঘবদ্ধভাবে একটি একমুখী বাংলাদেশ নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। যেকোনো ধরনের একমুখিতা ফ্যাসিবাদী দর্শনের বৈশিষ্ট্য। সংবিধানের প্রস্তাবিত সংস্কারে বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো হওয়ায়, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই, বর্তমান সরকারের কার্যকলাপ কেবলই কথাসর্বস্ব।

কথাসর্বস্বতা ও মন-ভোলানো প্রদর্শনীর নজির হিসেবে আমরা লাল গালিচায় খাল খনন কর্মসূচির উদ্ভট উদ্বোধন দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু দিনের পর দিন পান্থকুঞ্জ রক্ষার্থে অবস্থানরত বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদের ডাকে এই সরকার সাড়া দিচ্ছে না। ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করারও তাগাদা নেই। বরং সেই চুক্তিকে বহাল তবিয়তে রেখেই বিগত আমলের পুনরাবৃত্তি ঘটানো হচ্ছে। সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের নীরবতাও রহস্যজনক। দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খননের পাঁয়তারার কথা শোনা যাচ্ছে, যা হবে আত্মঘাতী। ফুলবাড়ির গণঅভ্যুত্থান ও শহিদ তরিকুল-আমিন-সালেকুলের রক্তে রঞ্জিত ফুলবাড়ির মাটিতে এসব নীলনকশা করার ষড়যন্ত্র জনগণ মানবে না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক পরিস্থিতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, বর্তমান রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার একেকটি উপশাখা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। জুলাই জাগরণের অন্যতম বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল সর্বত্র ভেঙে পড়া প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনাকে সংস্কার ও পুনর্জাগরিত করা। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আমরা সেই সংস্কারের বিন্দুমাত্র কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা পদ্ধতি এখনও ফ্যাসিবাদী আমলের মতোই অগণতান্ত্রিক রয়ে গেছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। অথচ, সরকার এতগুলো কমিশন করলেও, উচ্চ শিক্ষা কমিশন দুরাস্ত, কোনো শিক্ষা কমিশন গঠনের গরজ পর্যন্ত দেখায়নি।

এমনকি বর্তমান সরকার নির্দলীয় হলেও, উপাচার্য, ডিন, হল প্রভোস্ট, প্রক্টরের মতো প্রশাসনিক পদগুলোতে অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দলীয় নিয়োগ প্রদান করে চলেছে। শিক্ষক সমিতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না-হওয়া, নিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের বন্দোবস্ত না-করার কারণে ক্যাম্পাসগুলোতে একমুখী স্বৈরাচারী ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র তীব্র হুমকির মধ্যে পড়েছে আরো একবার। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নৈতিক পুলিশিং, বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ ও বৈষম্যমূলক পরিবেশ তৈরি, শিক্ষার্থী-রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরির মাধ্যমে উগ্রপন্থি শিক্ষার্থী সংগঠনের একচেটিয়া উত্থান হচ্ছে।

আমাদের বুঝতে বাকি নেই, নকশা মোতাবেক এই আয়োজন সম্পন্ন করার জন্যই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল, যাতে দায়ী ব্যক্তিকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ সাব্যস্ত করে এমন কাজের দায় ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর চাপিয়ে তাদের ওপর হামলাকে জায়েজ করা যায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত রেজিমের প্রশাসন হীনস্বার্থে এমনকি ক্ষুদ্রাকায় বিভিন্ন ভবনের নামকরণ করেছিল বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা মহীরুহ ব্যক্তিদের নামে। কিন্তু, সম্প্রতি বর্তমান কর্তৃপক্ষ যে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের নাম মুছে ফেলেছে সেটি অত্যন্ত অসম্মানজনক ও নিন্দনীয়। চলমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগে আমাদের আশঙ্কা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ইতিহাসকে অস্বীকার ও অসম্মান করার পন্থা বেছে নিয়েছে? বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ন্যাক্কারজনক দাবিও একই সূত্রে গাঁথা। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের নামফলক ও ভাস্কর্য ভাঙার উদ্দেশে হলে অবস্থানরত ছাত্রীদের তালাবদ্ধ করে, ছাত্রী হল প্রাঙ্গণে ছাত্ররা প্রবেশ করলে ছাত্রীরা স্বভাবতই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। গোটা ঘটনায় ১১ জন ছাত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে বহিষ্কার করা হয়, যারা প্রায় সবাই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং জুলাই জাগরণে সম্মুখ সারির যোদ্ধা। অপরাধ করেছে হলে অনুপ্রবেশকারী ছাত্ররা, অথচ সেটির প্রতিবাদ করায় দোষী হয়েছেন ছাত্রীরা। এ এক আশ্চর্য বিচার! 

প্রতিটি অঙ্গন থেকে একই প্রক্রিয়ায় দলমত নির্বিশেষে যারা সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ তাদের কণ্ঠরোধের সব ধরনের আয়োজন চলছে। এমন একটি ভয়াবহ নারীবিদ্বেষী সমাজ গঠনের আয়োজনে সরকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তা এই ধরনের চক্রান্তমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতি নীরব সম্মতি বলে আমরা মনে করছি।

অন্যদিকে, সাত কলেজের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সমাধানমূলক ব্যবস্থা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে পূর্বালোচনা ব্যতিত যে প্রক্রিয়ায় এই কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচয়ের সংকট তৈরি করেছে, তা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক। অধিভুক্তি না থাকার ফলে নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে’ রূপান্তরের দাবি আদায়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন সড়ক অবরোধ করেছে, যা স্বভাবতই জনদুর্ভোগের কারণ হয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশের জায়গায় জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে রোগ বিগত আওয়ামী সরকার কায়েম করেছিল, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি তার চেয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বিদ্যমান সকল পক্ষকেই বুঝতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি এত ক্ষুদ্র নয় যে, হরদরে যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা মনে করি, সরকার সাত কলেজের সমস্যার কোনো যৌক্তিক সমাধান করতে না পারার কারণেই তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন।     

এ অবস্থায় অন্তবর্তী সরকারের ৬ মাস পর্যবেক্ষণ করার পর দেশ ও শিক্ষাঙ্গনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রস্তাব ও দাবিসমূহ হলো:

দেশের প্রেক্ষাপটে

জুলাই হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
রাষ্ট্রের সকল স্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।

বিভেদমূলক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে, সব ধরনের মত ও বিশ্বাসের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে সক্রিয় ও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা।

রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ এবং পর্যায়ক্রমে বাতিল করা।

গ্রেফতার এবং হেফাজতে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনানুগ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং যেকোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করা।

মব সংস্কৃতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ধরনের অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে

জুলাই জাগরণের স্পিরিটকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উপাচার্য থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাচল ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা এবং যেকোনো বিচ্যুতির ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সকল ফোরামকে গণতান্ত্রিক পন্থায় সক্রিয় করা, সন্ত্রাসী ও দখলদারদের তদন্ত সাপেক্ষে সাজা দেওয়া এবং শিক্ষার্থী রাজনীতি বন্ধের সকল পাঁয়তারা বন্ধ করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বপ্রভাবমুক্ত সার্চ কমিটি গঠন করা। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ফলাফল বাদ দিয়ে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল গণ্য করা। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে, পিএইচডিধারী গবেষকদের অগ্রাধিকার দেয়া এবং সর্বোপরি মানসম্পন্ন গবেষণাকর্মকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া।

শিক্ষা-বাজেট বৃদ্ধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিকে অগ্রাধিকার-প্রাপ্য খাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। 

পরিশেষে, আমরা বলতে চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ভুলে গেলে চলবে না, অভয়ারণ্য নির্মাণের লক্ষ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে এদেশের মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল। যে কোনো অপশক্তি বাংলাদেশকে শ্বাপদসংকুল করে তোলার প্রচেষ্টা করলে, তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, অধ্যাপক কাজী মারুফ, অধ্যাপক স্বপ্ন আদনান, ড. সামিনা লুৎফা, ড. মোশাহিদা সুলতানা, ড. রুশাদ ফরিদী, অধ্যাপক নাসির আহমেদ, ড. সৌমিত জয়দ্বীপ, ড. কাজলি শেহেরীন ইসলাম, মারজিয়া রহমান, লায়েকা বশীর, হানিউম মারিয়া, দীপ্তি দত্ত, ড. ইসমাইল সাদী, রাইয়ান রাজী, অলিউর সান, শেহেরীন আতাউর খান প্রমুখ।

কেকে/এজে
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে নারীসহ গ্রেফতার ৪
শরীয়তপুরে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচি
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের

সর্বাধিক পঠিত

দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার
অযত্ন অবহেলায় রৌমারীর প্রথম শহিদ মিনার
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
কাপাসিয়ায় গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
সোনারামপুরে গ্রাম আদালত বিষয়ক মতবিনিময় সভা

শিক্ষা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝