শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
৯ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস       হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের      কর্মবিরতি স্থগিত, একুশে ফেব্রুয়ারি চলবে মেট্রোরেল      জামায়াত আমিরের স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা      অনিশ্চিয়তায় না রেখে দ্রুত নির্বাচন দিন: মির্জা ফখরুল       দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার      হৃদয়ের বীরত্বগাথা সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ের পুঁজি পেল বাংলাদেশ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
রণক্ষেত্রে পরিণত কুয়েট
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৩৮ এএম  (ভিজিটর : ৬৬)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও আহত হওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির ও বহিরাগতদের মধ্যে দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে উপাচার্যসহ অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহতাবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। ছাত্রদলের অফিসিয়াল পোস্টে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানান ছাত্ররা। 

এ সংঘর্ষে কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ আহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি জানান, দুগ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের সময় তিনি নিজেই আহত হয়েছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি।

কুয়েটের কয়েকটি সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ আছে। কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি যাতে আবার শুরু হতে পারে, সে জন্য ছাত্রদলের কর্মীরা গত সোমবার ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্ররাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’সহ বিভিন্ন সেøাগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় ছাত্রদলের কর্মীরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। 

দুপুর ২টার দিকে কুয়েট পকেট গেটের বাইরে বিএনপি সমর্থিত বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভেতর ফেলে রাখে। কুয়েট পকেট গেট থেকে বহিরাগতরা ছাত্রদলের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া কুয়েটের বাহিরেও ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির ও বহিরাগতদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ রূপ নেয়। বহিরাগতরা কুয়েটের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছে।

রাহাতুল ইসলাম নামে কুয়েটের এক ছাত্র জানান, ছাত্রদলের অফিসিয়াল পোস্টে ছাত্ররাজনীতি পক্ষে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মিছিল করছিলাম। এ সময় ছাত্রদলের একটি গ্রুপ আমাদের ওপর হামলা করে। হামলার সময় স্থানীয় একটি গ্রুপ রামদা-হকিস্টিক নিয়ে তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে হামলা করে। এসময় বিক্ষুব্ধ কুয়েট ছাত্ররা ভিসির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার পদত্যাগ দাবি করেন।

ছাত্রদলের একজন নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের অংশ এবং পতিত সরকারের ছাত্রসংগঠনের পক্ষের দু-একজন মিলে ক্যাম্পাস থেকে এবং ক্যাম্পাসের আশপাশে ছাত্রদলের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজকের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো।’ এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যৌথবাহিনী কুয়েট প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘কুয়েটে ছাত্রদের দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’

এদিকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল সন্ধ্যা ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ভিসি চত্বর ঘুরে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক জাকির হোসেন মঞ্জু বলেন, আবার যদি কেউ ছাত্রলীগের মতো ফিরে আসতে চায়, আর যদি কেউ আমাদের ভাইদের ওপর হামলা করে তবে তাদেরকে প্রতিহত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আবার রাজপথে নামবে। নতুন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের স্টাইল ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় হামলা চলবে না।

এদিকে কুয়েট ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিকালে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে দ্ইু প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম। 

নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে আসছে শিক্ষার্থীরা। গত বছরের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রদল কর্তৃক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবিতে মিছিল করেছিলেন একদল শিক্ষার্থী। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, তাহমীদ আল মুদ্দাসির, হাসিব আল ইসলাম, হামযা মাহবুবসহ প্রমুখ। আব্দুল কাদের বলেন, আমরা ৭ দফায় বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি থাকবে না। ছাত্ররাজনীতি হবে ছাত্রদের জন্য। 

জাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

গত ৩১ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন। এ সময় গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমরা ক্যাম্পাসে কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি

জগন্নাথ বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। একই দাবি তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। গত ৭ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরেধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিজয় লাভের অনুভূতি ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে গণমাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ আরো বেশকিছু বিষয় তুলে ধরেন।

এছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তুলে ধরেছেন।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে নারীসহ গ্রেফতার ৪
শরীয়তপুরে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচি
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু বাংলাদেশের

সর্বাধিক পঠিত

দুই সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার
অযত্ন অবহেলায় রৌমারীর প্রথম শহিদ মিনার
বিএনপির এক গ্রুপের মিছিলে অপর গ্রুপের হামলা, আহত ১০
কাপাসিয়ায় গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝