মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬নং আশিদ্রোন ইউনিয়নের মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার প্রধান সড়কটির অবস্থা বেহাল। কালিঘাট রোডস্থ বাইতুল আমান জামে মসজিদের সামনে থেকে দক্ষিণ মুসলিমবাগ (গাংপার ব্রিজ) পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কটি দীর্ঘ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন পড়ে আছে। মুসলিমবাগ, সুনগইড়, গাজীপুর এবং রামনগর এলাকার অন্তত দশ সহস্রাধিক পরিবারের যাতায়াতের জন্য এটিই একমাত্র সড়ক। এ সড়ক দিয়েই শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় আসতে হয় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা যায় কালিঘাট রোডস্থ কবরস্থান এর সামনে থেকে গাংপার ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের প্রায় অধিকাংশের পিচঢালাই ও ইট-খোয়া উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। দুই পাশ ভেঙে সংকুচিত হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই সেখানে জমে থাকে বৃষ্টির পানি। এতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চার গ্রামের বিশ সহস্রাধিক মানুষের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) শ্রীমঙ্গল অফিস সুত্রে জানা যায়, পৌর এলাকার কালিঘাট রোডস্থ কবরস্থান এর সামনে থেকে মুসলিমবাগ-গাজিপুর অভিমুখী এ রাস্তাটি এলজিইডি বিভাগ থেকে ২০১১ সালে পাকা করা হয়। নির্মাণের পর আজ পর্যন্ত সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ মুসলিমবাগ ও গাজিপুর এলাকার প্রধান সড়কের এমন বেহাল দশায় অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবর্তী নারী, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং পথচারীদের দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ রাস্তাটির সংস্কার না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এলাকাবাসির চরম ক্ষোভ এবং অসন্তুষ দেখা দিয়েছে।
মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম বলেন, এ ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়েই গর্ভবতী নারীদের নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়, ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে হয়। বড় বিপদের দুর্ভোগে আছি।
মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক মোঃ শামিম মিয়া জানান, অন্তত চার বছরের বেশি সময় ধরে এ সড়কে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। এমন বেহাল দশায় সাধারণ মানুষ এবং পথচারীদের দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষার আগেই যেনো এ রাস্তাটি সংস্কার করা হয় এ দাবি এলাকাবাসির।
মুসলিমবাগ সুনগইড় এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি দোকানে চাকরি করি, কর্মস্থলে পৌঁছতে সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করি। সড়কটি ভাঙ্গাচোরার কারণে রিকশা, টমটম প্রায় যেতে চায় না। তাছাড়া বাড়তি মাশুল গুনতে হয়। এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, শহরে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। সড়কটি খানাখন্দের কারণে সময়মত যেতে পারিনা দোকানে। প্রায় সময় টমটম, রিকশা চালকেরা বাড়তি ভাড়া দাবি করে বসেন।
টমটম চালক কবির মিয়া বলেন, প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে অনেকবার যাতায়াত করা যেতো, খানাখন্দ হওয়ায় দুবার যাতায়াত করা দুষ্কর। সড়কের দুরবস্থার কারণে হালকা যানবাহন চলাচলে বেগ পোহাতে হয়। প্রাইভেটকার, সিএনজি, টমটম, রিকশার মতো হালকা যানবাহন উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। প্রতিদিন সাতশো থেকে হাজার টাকা আয় হতো, সড়কটি ভাঙ্গাচোরার কারণে আমাদের তিনশো থেকে চারশো টাকা আয় কমে গেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবি ছালেক মিয়া বলেন, সড়কটি ছোট হওয়ায় দুটি রিকশা অতিক্রম করাটা কষ্টের ব্যাপার। ওভারটেক করতে গেলে প্রায় সময় উল্টে যায় যাত্রীবাহী যান এতে অনেকেই হতাহত হয়। তিনি সড়কটি প্রশস্ত করে সংস্কারের জোর দাবি জানান।
রামনগর এলাকার বাসিন্দা হাজী সোনা মিয়া সুরজান বিবি আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে আমার কর্মস্থলে আসতে হয়। আবার এই রাস্তা দিয়েই গর্ভবতী নারী, অসুস্থ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য মানুষের যাতায়ত। অথচ গত কয়েক বছরে আশপাশের অনেক সড়ক উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গেলেও অদৃশ্য কারনে এই সড়কে দীর্ঘদিন ধরে কোনে সংস্কার হয়নি, যেন অভিভাবকহীন।
পথচারি রঞ্জন দেবনাথ বলেন, রাস্তাটি পাকা হয়েছে প্রায় ১২বছর হবে। কিন্তু এরপর আর কেউ সংস্কার করেছেন কিনা স্মরণ হচ্ছে না। সংস্কার না হওয়ার কারণে এই ভাঙা রাস্তায় পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী তাওহিদুর রহমান বলেন, এই রাস্তাটি সংস্কার করারযেনো কেউ নাই। বহু কষ্ট হয় এই ভাঙ্গা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসতে হচ্ছে। জনদুর্ভোগ দূরীকরণে রাস্তাটি দ্রæত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
স্থানীয়রা বলেন, মুসলিমবাগ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারাভাবে খানাখন্দকে জনসাধারনের চলাচলে প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তা সংস্কারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬ নং আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নরেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন (জহর) এর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউসুফ হোসেন খান দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, মুসলিমবাগ রাস্তা সংস্কারসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা গত ৫ আগস্টের পূর্বে আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠিয়েছিলাম। সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রকল্পটি অধিদপ্তরে আটকে আছে। তবে জনসাধারনের দুর্ভোগের লাঘবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইসলাম উদ্দিন বলেন, মুসলিমবাগের রাস্তাটি বেহাল এ বিষয়টি আমার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কেকে/এআর