শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১০ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে      তিন বিভাগে ৩ দিন বজ্রবৃষ্টির আভাস      খিলগাঁওয়ে স-মিলে আগুন      মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন: ড. ইউনূস      ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আমরা ঐক্য চাই’      রাসূল (সা.) এর কটুক্তিকারীর শাস্তির দাবিতে গোবিপ্রবিতে বিক্ষোভ      বাধ্যতামূলক অবসরে অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার      
খোলাকাগজ স্পেশাল
বাগযুদ্ধে ছাত্রদল-শিবির উত্তপ্ত ছাত্ররাজনীতি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:১৮ এএম আপডেট: ২০.০২.২০২৫ ৯:২৫ এএম  (ভিজিটর : ১০৮)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর থেকে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির। 

ছাত্রদলের অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধীর আড়ালে ছাত্রশিবিরই এ হামলার ঘটনা ঘটায়। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রকিব বলেছেন, কুয়েটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থগিত কমিটির আহ্বায়ক ওমর ফারুকের নেতৃত্বে প্রথমে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। আর ওমর ফারুককে আমরা ছাত্রশিবিরের নেতা বলেই জানি। কুয়েট ক্যাম্পাসে যারা হামলা করেছে তাদের সবাইকে শিবিরের নেতা হিসেবে জানি। 

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি সাড়া দেয়, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না। কিন্তু পরবর্তীতে শিবির যখন আত্মপ্রকাশ করে কমিটি গঠন করে। সেখানে দেখা যায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অর্থাৎ যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকবে না বলছে তারাই শিবিরের নেতাকর্মী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কুয়েটে ৭ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটি দিয়েছে এবং শিবিরের কমিটিও রয়েছে। এ শিবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যদি রাজনীতি করতে পারে, আমার ছাত্রদলের সমর্থকরা যদি একটা সমর্থক ফর্ম নিয়ে থাকে তাহলে কী তারা অপরাধ করেছে? 

রকিব আরো বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগ যেমন অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের নানা অপকর্মের সাফাই দিতো, ঠিক সেভাবেই ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গুপ্ত সংগঠন শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামকে কলুষিত করছে এবং এ নাম ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যাম্পাসগুলোয় ভিন্ন রূপে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। 

এদিকে ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্রশিবিরের উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। ছাত্রদলকে আমরা শত্রু মনে করি না। আমাদের লড়াই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তাদের সরাসরি কিংবা কৌশলে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতির ধারায় ফিরে আসুন। কিন্তু বন্ধুপ্রতিম সংগঠনটি আমাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট ও তাদের শাহবাগী দোসরদের পরামর্শে অগ্রসর হচ্ছেন, যার প্রতিফলন আজ কুয়েটে প্রমাণিত হলো। 

শিবির সভাপতি আরো বলেন, আমরা আপনাদের শত্রু নই। কিন্তু আপনারা হাঁটছেন ঠিক আগের মতো উল্টোপথে। দখলদারিত্বের মনোভাব পরিহার করে, শিক্ষা ও সেবামূলক ছাত্ররাজনীতির ধারায় ফিরে আসুন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামর্থ্যরে আলোকে ভূমিকা রাখুন। যাদের পরামর্শে অগ্রসর হচ্ছেন, তারা ছাত্রলীগকে যে পরিণতি বরণ করিয়েছে, আপনাদেরও একই পরিণতি করতে ছাড়বে না। 

এদিকে ছাত্রশিবির সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর নারকীয় হামলার সঙ্গে ছাত্রদল, যুবদল ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা জড়িত। অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের পর এক যুবদল ক্যাডারকে বহিষ্কার করে তারা কার্যত এ ঘটনার দায় স্বীকার করে নিয়েছে। এতে পুরো ঘটনার সঙ্গে তাদের সাংগঠনিক সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট হয়ে যায়। 

বিরোধ মেটাতে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপ চাইলেন আসিফ নজরুল

ছাত্রদল ও শিবিরের দ্বন্দ্ব মেটাতে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপ চাইলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যেভাবে নিজ নিজ অফিশিয়াল প্যাডে একে অন্যের নাম উল্লেখ করে দায় আরোপ ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, এটা খুব খারাপ ভবিষ্যৎই ইঙ্গিত করছে সামনে। আমার মনে হয়, এদের প্যারেন্ট সংগঠনের সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা অতি জরুরি এবং একান্ত অপরিহার্য। আল্লাহ সবাইকে হিফাজত করুক, সঠিক জ্ঞান-বুঝ দিক। আমিন। 

শিবিরকেই রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে : ড. জাহেদ উর রহমান

দেশের শীর্ষ দুই ছাত্র সংগঠনের দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্রশিবির এরা একত্রে ছিলেন বিপরীতে ছাত্রদল, তাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। একটা বিভৎস ব্যাপার চোখে পড়ল সেটা নিয়ে কথা বলি, এ ঘটনার পর খুলনায় একটা জমায়েতের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে যেখানে বোঝা যাচ্ছে এটা ছাত্রদলের একটা সমাবেশ বা জমায়েত, সেখান থেকে একটা দুইটা শিবির ধর ধইরা ধইরা জবাই কর এ ধরনের স্লোগান শোনা যাচ্ছে, বিভৎস স্লোগান যে স্লোগানটা গণজাগরণ মঞ্চে দেওয়া হয়েছিল। আমি এই স্লোগানের খুব স্ট্রংলি কনডেম করি এবং একজন দুজনও এই স্লোগান দিতে পারে না বিএনপিকে এটা নিশ্চিত করতে হবে ছাত্রদলকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রশিবির বা জামায়াতের রাজনীতি আমি পছন্দ করি না আমি বিরোধিতা করি খুব প্রকাশ্যভাবে। জামায়াত এবং ছাত্রশিবির আদতে কতটুকু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করে তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। আমি আলাদাভাবে একদিন সে নিয়ে কথা বলবই, ইনফ্যাক্ট সাম্প্রতিক সময়ে যা ঘটেছে সেটার ভিত্তিতে কিন্তু এ দেশের নিয়মতান্ত্রিক যে রাজনীতি এদেশের সাংবিধানিক যে রাজনীতি সেটা মেনে নিয়ে তারা রাজনীতি করছেন সুতরাং তারা এ রাজনীতি করবেন তাদেরকে পলিটিক্যালি কমব্যাট করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই দাঁড়াতে হবে। 

তিস্তা আন্দোলনের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে কুয়েটের সংঘর্ষ : ইশরাক

এদিকে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেছেন, তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, আজকে রাত জেগে ২০টা টিভি, ১০টা অনলাইন পোর্টাল, মূলধারার পত্রিকা, কয়েকটা ইউটিউব চ্যানেল আর অনেক টকশো বিশ্লেষণ করে আমার উপলব্ধি, খুলনা ও কুয়েটের কিছু কুকুর সমতুল্য দুর্বৃত্তের কারণে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আন্দোলনকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। ভারতের অন্যায় ও অবৈধ আচরণের কারণে কয়েক দশক ধরে দুই কোটি জনগণের আহাজারি নিরসনের এ কর্মসূচি কয়েকটি মানুষরূপী কুকুরের কামড়াকামড়িতে দেশের মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজটি করল। 

ইশরাক হোসেন বলেন, কুকুরগুলো কোন দল করে জানি না, প্রয়োজনও নেই। যারাই দোষী তাদের খাঁচাবন্দি করার দায়িত্ব পুলিশের। তারা সেটি করতে ব্যর্থ হলে তাদেরও ষড়যন্ত্রের অংশীদার হিসেবেই গণ্য করতে হবে। 

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পরে রাতে শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, উপউপাচার্য, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কুয়েটে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। কুয়েটে সংঘর্ষের পর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল। 

কেকে/ এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  ছাত্রদল   ছাত্রশিবির  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলার মাটিতে ফ্যাসিস্টদের জায়গা হবে না: অধ্যক্ষ মুন্তাজ আলী সরকার
দেশে চলমান নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে মশাল মিছিল
মহিলা জামায়াত নেত্রীকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রলি খাদে, নারীসহ নিহত ২
দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে

সর্বাধিক পঠিত

নালিতাবাড়ীতে মাদকবিরোধী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
শহিদ দিবসের ফুল আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী
টঙ্গীতে গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
পরকীয়ার জেরেই স্বামী সন্তানের হাতে বলি স্কুলশিক্ষিকা মিলি
নোবিপ্রবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝