আবহাওয়াজনিত কারণে বাংলাদেশের মধ্যে সাতক্ষীরার আমে আগে ফলন হয়। সাতক্ষীরায় আম আগে আসার কারণে দেশব্যাপী সাতক্ষীরার আমের চাহিদা বেশি। শুধু দেশে নয় সাতক্ষীরার আম বিদেশেও রপ্তান্তি হয়। এখনে হিমসাগর, ন্যাংড়া , গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, খাসগোলাপ আম বিখ্যাত। জেলায় এখন গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আম্র মুকুল।
জেলায় মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে আম বাগান। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পরাগের পাগল করা ঘ্রাণ। আমের মুকুলের ম-ম ঘ্রাণে মুখরিত এখন সাতক্ষীরা। গাছে গাছে দুলছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সেই মুকুলের উতাল করা ঘ্রাণ। শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে সোনালি রং ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। তবে গতবছর প্রথম থেকেই বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আমচাষিরা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় ৫ হাজার আম বাগান রয়েছে। আমের চাষ হয়েছে ৪ হাজার এক শত আঠারো হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
গত মৌসুমে জেলার আম বাগানগুলোর অধিকাংশ বাগানে আশানুরূপ আমের মুকুলের দেখা মেলেনি। গত মৌসুমের তুলনায় এবার জেলার আম বাগানগুলোতে দ্বিগুণ মুকুল এসেছে। আমের এই সোনালি মুকুলে জেলার প্রায় ১৫ হাজার আমচাষির স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। তাই তারা আম বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে রয়েছে আরও কয়েক হাজার আমচাষি।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ৪হাজার ১১৮হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গড় ৬০টাকা কেজি ধরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আমের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।
শহরের মুনজিতপুর গ্রামের আমচাষি আমিনুর রহমান আলম ও বুলু জানান, তাদের আম বাগানগুলোতে মুকুল শোভা ছড়াচ্ছে। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো। প্রায় জেলার ৯৫ শতাংশ আমগাছ মুকুলে শোভা পাচ্ছে। এর মধ্যে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, লতা, আশ্বিনা, গোবিন্দভোগ, কালীভোগ, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে।
কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছেন জানিয়ে আমচাষিরা জানান, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে সাতক্ষীরার বাগানগুলোতে আগাম মুকুল আসে। রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগুলোর অন্তত ১৫/২০ দিন আগে সাতক্ষীরা অঞ্চলের বাগানে মুকুল আসে। ফলে সাতক্ষীরা অঞ্চলের আমও রাজশাহী অঞ্চলের তুলনায় ২৫/২০ দিন আগে পাকে। এ কারণে সাতক্ষীরার আমের প্রতি আলাদা চাহিদা রয়েছে বাজারে।
তারা আরও জনায় , মুকুল আসার আগে আম গাছের পরিচর্যা নিতে হয়। ইতোমধ্যে মুকুল সংরক্ষণ নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। এবার কিছুটা আগে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। গাছগুলোতে মুকুল আশাতেই সাতক্ষীরার বাইরের ব্যবসায়ীরা আসছেন এবং বাগানে বাগানে গিয়ে খবর নিচ্ছেন। আবার অনেকে আগাম আমবাগান কিনছেন।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, এবার সাতক্ষীরা জেলার ৪হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হচ্ছে। যা থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষিবিভাগ। ইতোমধ্যেই আমের মুকুল এসেছে, এই সময়ে সাধারণত হুপার পোকা আক্রমণ করে। যার কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যায়।
এ ছাড়া বিচিং পদ্ধতিতে সেচ না দেওয়ার কারণে মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়ে। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে ও ফলন ভালো পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমচাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, আবহওয়া ও জাতের কারণে মূলত জেলায় নির্ধারিত সময়ের আগে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, জেলায় ৫ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় সাতক্ষীরার আম শুধু দেশে নয় বিদেশে ও রপ্তানি হয়।
কেকে/এএস