বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মো. রেজোয়ান হোসেন মাতুব্বরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক করার নামে ঘুষ নেওয়া, সরকারি সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার এবং ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের দাবি, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে রেজোয়ান হোসেন মাতুব্বর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে-বেনামে একাধিক সম্পদ গড়েছেন। পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন থানা রোড এলাকায় চার কাটা জমি কিনে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যা বর্তমানে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইমালি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় স্ত্রী কহিনুর বেগমের নামে সদ্য ক্রয় করা একটি বসতবাড়ি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শুভরাজকাঠি এলাকায় ২০২৪ সালে এক বিঘা জমি কিনে ছোট মেয়ে মুনমুনের নামে নির্মিত পাকা বাড়ি এবং একই এলাকায় খালের অপর প্রান্তে ছেলে নাইম মাতুব্বরের নামে নতুন একটি আলিশান পাকা ভবন রয়েছে।
তবে তার পৈত্রিক বাড়ি যেখানে তিনি থাকেন, সেটি এখনও কাঠের ঘর হিসেবে রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে তার মাসিক বেতন স্কেল ২৩,৫০০ টাকা হলেও এত দ্রুত এত সম্পদের মালিক হলেন কীভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারি কাগজপত্র ঠিক করার নাম করে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রেজোয়ান হোসেনের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের কাগজপত্র দ্রুত অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
২০২০ সালে করোনাকালে মারা যাওয়া হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মীনা রানির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, তার পেনশনের কাগজপত্র ঠিক করতে ৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। তবুও চার বছর ধরে সেই টাকা উত্তোলন করতে পারেননি তারা। শেষ পর্যন্ত নিজেরাই চেষ্টা করে টাকা তুলতে বাধ্য হন।
এ ছাড়া, তার প্রতিবন্ধী বড় ছেলে দিপংকর শিকদারের প্রতিবন্ধী ভাতার কাগজপত্র ঠিক করার জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের ছোট ছেলে শুভংকর শিকদার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন রেজোয়ান হোসেন। সাবেক এক সচিবের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে হাসপাতালের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে মো. রেজোয়ান হোসেন মাতুব্বর বলেন, শুভরাজকাঠী গ্রামের বাড়িটি আমার জামাতা আবজাল হোসেনের। আমি একাধিক জমির মালিক নই। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মীনা রানির কোনো টাকা আমি নিইনি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি যোগদানের পর দুইজন অবসরে গেছেন। তাদের পেনশনের কাগজপত্রের জন্য কোনো অর্থ দিতে হয়নি। ইতোপূর্বে পেনশনের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়ে থাকলে তা আমার জানা নেই। মীনা রানির পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএম