রাজনীতি নিষিদ্ধ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ১৩২ সদস্যের নতুন কমিটি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল সাক্ষরিত এই কমিটি ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেইজে প্রকাশ করা হয়।
কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তুষার আহমেদকে আহ্বায়ক ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম তামিমকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিতে মুখ্য সংগঠক হিসেবে আছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবিব হাসান ও মুখপাত্র পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান রাব্বি।
এ ছাড়া কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ২ জন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ১২ জন, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ২ জন, যুগ্ম-সদস্য সচিব ১৪ জন, সংগঠক ১৭ জন, সদস্য হিসেবে আছেন ৮১ জন।
সদ পদত্যাগ করা সদস্য রঞ্জন পাল বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রুপে পোস্টের মাধ্যমে জানান, তাকে অবগত না করেই কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে।
এরপর নিজের টাইমলাইনে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) সম্পূর্ণরূপে অরাজনৈতিক সংগঠন বলে জানিয়েছেন আহ্বায়ক মো. তুষার আহমেদ। কমিটির সদস্য নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, সদস্য গ্রহণের জন্য তিনটি প্রধান শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রথমত, যিনি পূর্বে শিক্ষার্থী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং এখনো আন্দোলনের চেতনা ধারণ করেন। দ্বিতীয়ত, ৫ আগস্টের পর যার বিরুদ্ধে মামলা, চাঁদাবাজি, সহিংসতা বা কোনো বিতর্কিত ঘটনা নেই। এবং তৃতীয়ত, যিনি কোনো রাজনৈতিক পদে নেই। তবে যদি আগে রাজনীতি করে থাকেন, তবে তাকে সেই পদ থেকে অব্যাহতি বা পদত্যাগ করতে হবে। এই তিনটি শর্ত পূরণ করলেই যে কেউ সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
তিনি বলেন, এমবাস্টু ফ্যামিলি (বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপ)-তে পোস্ট করা হয় এবং একটি সার্চ টিম গঠন করা হয়, যারা প্রতিটি ব্যাচে তথ্য পৌঁছে দেয়। যারা একবার সংগঠনে থাকতে চাননি, তাদের পুনরায় যুক্ত হওয়ার জন্য বলা হয়নি। অনেক আন্দোলনকারী কমিটিতে না থাকলেও প্রয়োজনে সংগঠনের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রায় ২০০ জনের তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ১৩২ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিতর্ক এড়াতে সন্দেহজনক নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
রঞ্জন পালের বিষয়ে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ ক্যাম্পাসের মাঈনউদ্দিন নামের একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে মাধ্যমে চারজনের একটি তালিকা পাওয়া যায় এবং তাদের ভেরিফাই করতে বলা হয়। মাঈনউদ্দিন নিশ্চিত করেন যে তারা সংগঠনে থাকতে চান এবং কোনো আপত্তি নেই। তবে কমিটি প্রকাশের পর রঞ্জন পাল মত বদলে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ান।
তুষার আহমেদ আরো বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কল করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে যাচাই করেছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংগঠনে কেউ যদি বিতর্কিত সদস্যের উপস্থিতির প্রমাণ দিতে পারেন, তবে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
পদত্যাগকারী শিক্ষার্থী রঞ্জন পাল বলেন, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। মাঈনউদ্দিন আমার নাম কমিটিতে দিয়েছেন, যা মূল ক্যাম্পাস থেকে আমাকে জানানো হয়। এর আগে তিনি আমাদের গ্রুপে একটি নাম্বার দিয়েছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল—যদি কেউ কমিটিতে যুক্ত হতে চায়, তাহলে যোগাযোগ করতে পারে। তবে আমি কখনোই তার সঙ্গে বা ওই নাম্বারে যোগাযোগ করিনি। পরবর্তীতে, ক্যাম্পাসে অনেকেই আমাকে নেতা বলে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করলে আমি অবাক হয়ে জানতে পারি, আমাকে বৈষম্যবিরোধী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ আমি রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো কমিটিতে থাকতে আগ্রহী নই।
আজ তুষার ভাই আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, তোমার নাম তোমার ক্যাম্পাস থেকেই দেওয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করি, নাম দেওয়ার আগে ভেরিফাই করা হয়নি? তিনি বলেন, সবার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এটি কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া হয়েছে, আমি চাইলেই বাদ দিতে পারি না।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ এর ধারা ৪৭(৫) কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার রাজনৈতিক মতামত পোষণের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না করিয়া তাহার চাকুরীর শর্তাবলী নির্ধারণ করিতে হইবে, তবে তিনি তাহার উক্ত মতামত প্রচার করিতে পারিবেন না বা তিনি নিজেকে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সহিত জড়িত করিতে পারিবেন না।
কেকে/এএম