নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের নেতৃত্বে শোক পদযাত্রা, সশস্ত্র সালাম প্রদান, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন, সংক্ষিপ্ত আলোচনা, বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করা হয়।
নোবিপ্রবির জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি, প্রক্টর অফিস, বিএনসিসি, ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ কর্মসূচিসমূহের আয়োজন করে।
২১ ফেব্রুয়ারি-এর প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের উপস্থিতিতে নোবিপ্রবি শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। সকালে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শোক পদযাত্রা শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় উপাচার্যের উপস্থিতিতে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজিদ হোছাইন চৌধুরী। পরে নোবিপ্রবির বিভিন্ন অনুষদ, ইনস্টিটিউট, বিভাগ, হল, বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে শহিদ মিনারের পাদদেশে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে ভাষার জন্য যারা শহিদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে বায়ান্ন থেকে শুরু করে একাত্তর, নব্বই ও সর্বশেষ চব্বিশে যারা আত্মত্যাগ করে নতুন একটি বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের স্মরণ করছি। মহান ভাষা আন্দোলনে শহিদ আবদুস সালাম এই নোয়াখালীরই সন্তান। এই জেলার অনেক প্রতিষ্ঠান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
উপাচার্য আরো বলেন, আজকে যারা নতুন প্রজন্ম তাদের কাছে ভাষার যে স্বাতন্ত্র্যবোধ এবং জাতিসত্তার যে পরিচয় তা যেনো আরো প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে এবং আমরা যেন সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করতে পারি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। প্রমিত বাংলায় যে নতুন পরিবর্তন এসেছে তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলার পাশাপাশি আমাদের যে আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে তার গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমিত বাংলার চর্চা করবো এবং বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দেবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা এখানে একটি ‘ভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যেন ভাষা নিয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সমবেত সকলকে ধন্যবাদ।
এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে সারা বছর বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন করব। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যতটুকু উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন আমরা তা করব। মূলত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই মহান ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত এবং সর্বশেষ জুলাই-২৪ সহ প্রতিটি আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাই সবার আগে প্রাণ দিয়েছে। আজকের এই দিনে আমি প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে যে ছাত্র, শিক্ষক, জনতা শহিদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এ দেশে ভাষার জন্য আমরা জীবন উৎসর্গ করেছি, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। আমরা বারবার নিপীড়িত হয়েছি এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তরুণ যুব সমাজ প্রাণ দিয়েছিল রাজপথে। বায়ান্নতে যে ঘটনাটি ঘটেছিল একাত্তরেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বর্তমানে দৃশ্যমান জুলাই, চব্বিশেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমরা বারবার প্রতিবাদ করেছি বারবার রক্ত দিয়েছি। ১৯৫২ থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। শহিদ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের একটি স্বপ্ন ছিল। আমরা শহিদদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাব এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এ সময় নোবিপ্রবির বিভিন্ন অনুষদসমূহের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, হলের প্রভোস্টসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানমালা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাবের আয়োজনে ‘আলোকচিত্রে ভাষা আন্দোলন’ শীর্ষক প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত হল লাইব্রেরির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন তিনি। প্রভোস্ট ড. আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেখানে হল লাইব্রেরির উদ্বোধন ও সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন উপাচার্য। অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে আরো বক্তব্য দেন নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, গ্রন্থাগারিক ও হলের সহকারী প্রভোষ্টবৃন্দ। এ সময় হলের আবাসিক ছাত্রী ও কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এদিন বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ভাষা শহিদদের উদ্দেশ্যে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কেকে/এএম