১৯৫২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশের জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একুশ হলো শোক, গর্ব, ঐতিহ্য এবং অনুপ্রেরণার দিন।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি শুরুতেই ১৯৫২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশের জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, ‘একুশ হলো শোক, গর্ব, ঐতিহ্য এবং অনুপ্রেরণার দিন। আর তা শুধু আজকের দিনের জন্যই নয় অনাগত দিনের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। একুশের যে শিক্ষা বা প্রভাব তা অনাগত ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
প্রধান অতিথি আরো বলেন, ‘ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হয় আবার ভাষার ভিত্তিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিভক্ত হওয়ার চেতনা তৈরি হয় ১৯৫২ সালে। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভাষা বাংলা হলেও সংখ্যালঘিষ্ট কিছু এলিট শ্রেণির ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে শুরু হয় আন্দোলন। এদেশের জনগণ বিশেষ করে ছাত্র সমাজ পাকিস্তানের এই প্রভূত্ব ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে এবং আন্দোলনে আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রভূত্ব ও বৈষম্য কখনও স্থায়ী হয়নি এবং ভবিষ্যতেও কখনও স্থায়ী হবে না।’
মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে উল্লেখ করে উপাচার্য বাংলা ভাষায় গবেষণাকর্ম সম্পাদন করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেনা দেওয়ার জন্য গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শুক্রবার প্রথম প্রহরে ভাষা শহিদদের স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
এসময় ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। পরে একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ ভাষা শহিদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ভাষা শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো ব্যাজ ধারণ করে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও কালো পতাকা উত্তোলন করেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরা হয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চারুকলা অনুষদের ডিন ও ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলম। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ভাষা শহিদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
কেকে/এজে