২০২১ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের ‘প্রারম্ভিক কিন্ডারগার্টেন’ এর শিক্ষিকা সান্তনা রায় মিলি চক্রবর্তী (৪৫) এর অস্বাভাবিক মৃত্যৃটি ছিল একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সে সময় এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও প্রায় ৪ বছর পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্তকারী বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তে উঠে আসে, পরকীয়ার জেরেই নিজ স্বামী আর সন্তানের হাতে বলি হতে হয় মিলিকে।
তিন বছর সাত মাস পর বৃহস্পতিবার রাতে (২০ ফেব্রুয়ারি) পুলিশের অপরাধ তদন্তকারী বিভাগের চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত শেষে মিলি চক্রবর্তীর স্বামী সমির কুমার রায়, ছেলে রাহুল রায় সহ চারজনকে অভিযুক্ত করে ঠাকুরগাঁও সদর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল আমলি আদালতে চার্জশিট জমা দেয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন এ চার্জশিট জমা দেন।
এ মামলার অন্য আসামীরা হলেন সমিরের ভাইয়ের ছেলে স্বপন কুমার রায় ওরফে মানিক এবং মিলির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক জড়ানো জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সোহাগ।
সিআইডির এএসপি সুমিত চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আমিনুল ইসলাম সোহাগের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান স্কুলশিক্ষিকা সান্তনা রায় মিলি চক্রবর্তী। তারা দুজনে মোবাইলে ফেসবুকের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করতেন। আর মিলির ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড তার ছেলে রাহুল রায় জানতেন। তাতে রাহুল রায় তার মায়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন ও ম্যাসেঞ্জারে তাদের বার্তা, ছবিসহ আপত্তিকর ভিডিও দেখে ফেলেন। পরে এ বিষয়টি তার স্বামীও জেনে যান। ঘটনার দিন (২০২১ সালের ৮ জুলাই) মিলির সঙ্গে তাদের বাদানুবাদ হয়।
একপর্যায়ে তাকে মারধর ও বুকে আঘাত করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলি। এরপর রাত ৩টার দিকে তাকে ঘর থেকে বের করে বাইরে নিয়ে যায় মিলির স্বামী ও ছেলে। পথে বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী জিজ্ঞাসা করলে স্বামী ও ছেলে জানান, অসুস্থ হওয়ায় মিলিকে তারা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
তাকে হাসপাতালে না নিয়ে সমির, স্বপন কুমার রায়, রাহুল রায় পরামর্শ করে বাড়ির পাশের একটি গলিতে কেরোসিন ঢেলে মিলির শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যুর পূর্বে মিলিকে মাথায় ও বুকে আঘাত করা হয়। পরে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এএসপি সুমিত চৌধুরী জানান, ২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে হত্যাকারীরা এ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে প্রভাব খাটিয়েছিল। মামলাটি তদন্ত করতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি বরং এটিকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে। তাই প্রতিবেদন দাখিল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এমন একটি মামলা শেষ পর্যন্ত সঠিক তদন্ত করতে পেরে আমাদের ভালো লাগছে। আশা করি আদালতের মাধ্যমে দোষীদের বিচার নিশ্চিত হবে।
এ মামলায় মিলির স্বামী সমির কুমার রায় ও সমিরের ভাতিজা স্বপন কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। তার ছেলে রাহুল রায় ও আমিনুল ইসলাম সোহাগ বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
কেকে/ এমএস