জয়পুরহাটে সরকারি পুকুরের ইজারা না থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক মাছ ছাড়তে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা দিয়ে প্রতিপক্ষদের ওপর হামলা করে বেদম মারধর করা হয়েছে। এতে একপক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার পশ্চিম পেঁচুলিয়া কোচপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একপক্ষ মামলা করা মামলায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।
মারধরে একপক্ষের আহতরা হলেন- কোচপাড়া গ্রামের রাজেন চন্দ্র বর্মণ, পবিত্রা রানী, ভারতী রানী, অর্চনা রানী, মিঠুন চন্দ্র বর্মণ, বিজলী রানী, পাতুকা রানী, মুক্তা রানী, স্বপ্না রানী, চন্দনা রানী, বিধান চন্দ্র ও শুভ চন্দ্র বর্মণ। এদের মধ্যে গুরুতর জখম হয়েছেন রাজেন চন্দ্র বর্মণ, পবিত্রা রানী, ভারতী রানী, অর্চনা রানী, মিঠুন চন্দ্র বর্মণ, বিজলী রানী। তারা জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর অন্যরা আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় অপরপক্ষের এক থেকে দুইজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ-প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কোচপাড়া এলাকায় একটি সরকারি পুকুর রয়েছে। কোচপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা বিগত কয়েকবছর ধরে একটি সমিতির নামে ওই পুকুরটি ইজারা নিয়েছিল। বাংলা ১৪৩০ সন পর্যন্ত তাদের ইজারা ছিল। ওই পুকুরটি আগে পার্শ্ববর্তী জিতারপুর গ্রামের মওলা, মিষ্টার, কাসেমরা চাষ করতো। এই পুকুর নিয়ে আদালতে একটি মামলায় চলমান থাকায় ১৪৩১ সন থেকে কেউ ইজারা পায়নি। তবে পুকুরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ির পাশে হওয়ায় তারা ব্যবহার করতো। শুক্রবার সকালে মওলা, মিষ্টার, কাসেম তাদের লোকজন নিয়ে ওই পুকুরে মাছ ছেড়ে দিতে যায়। এসময় রাজেন মাছ ছাড়তে নিষেধ করলে তাকে মারপিট করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে সবাইকেই এলোপাতাড়ি মারধর করে আহত করা হয়। পরে সেখানে থাকা দুটি খড়ের পালায় আগুন দেওয়া হয়।
আহত অর্চনা রানী বলেন, ওই পুকুরের পাশে আমাদের গ্রামের মন্দির রয়েছে। মন্দিরের প্রতিমা সেখানে ডুকানো হয়। আর গ্রামের সবাই ওই পুকুর ব্যবহার করি। এজন্য গ্রামের পক্ষ থেকে ইজারা নেওয়া ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সকালে এসে আমাদের ওপর হামলা করে এলাপাতাড়ি মারধর করে আহত করা হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার বাদি সুবাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমাদের গ্রামের খাস পুকুরটি বাংলা ১৪৩০ সন পর্যন্ত পশ্চিম পেঁচুলিয়া কোচপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নেওয়া ছিল। ১৪৩১ ও ১৪৩২ সনের জন্য পুনঃরায় ইজারা নিতে উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি পাওয়া যায়নি। যেহেতু আমরা আগে থেকেই মাছ চাষ করতাম এজন্য পুকুরটি ব্যবহার করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে আজকে সকালে জোড়পূর্বক মাছ ছেড়ে দিতে গিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। আমাদের গ্রামের লোকজনদের যেভাবে মারধর করা হয়েছে তা বলার মতো না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
জানতে চাইলে উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার রাজিব কুমার বিশ্বাস বলেন, ওই পুকুরটি এখন কোন পক্ষের কাছে নেই। সেটি নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলছে। এ কারণে ইজারা দেওয়া হয়নি। মারধরের স্বীকার ব্যক্তিরা থানায় মামলা করবেন। তাছাড়া তাদের দুটি খড়ের পালায় আগুন ধরে দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটির ক্ষতিপূরণ দিতে চাওয়া হয়েছে।
এসপি মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, মূলত পুকুর নিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে চারজন এজাহারনামীয় আর দুইজন অজ্ঞাত। তারা হলেন, গোলাম রব্বানী, গোলাম মওলা, মোতাহার হোসেন, জামিউল লাদাইন, ছানোয়ার হোসেন ও লিয়াকত আলী।
কেকে/এজে