জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলেছিল। পরবর্তীকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে নয় দফা দাবি ঘোষণা করে, সেখানেও ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি’ নিষিদ্ধের কথা বলা হয়। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিষ্ক্রিয় আছে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলো। এর মধ্যেই জুলাই অভ্যুত্থানে থাকা ছাত্রনেতারা নতুন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন গঠন করতে যাচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক নতুন ছাত্র সংগঠনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। তারা বলেন, নতুন ছাত্র সংগঠন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এমনকি রাজনৈতিক দল গঠনের আগেই ছাত্র সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে এমন কথাও জানানো হয়। তবে সম্ভাব্য ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণায় নতুন প্রশ্নও উঠেছে। এ ছাত্র সংগঠনটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন হবে কি না এমন সন্দেহ দেখা যাচ্ছে কারও কারো মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে যে, এক সময় যারা নিজেরাই লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিলেন, এখন তারাই কেন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন তৈরি করছেন।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র আবু বাকের মজুমদার। তিনি জানান, ছাত্র সংগঠন তৈরির কাজ তারা গুছিয়ে এনেছেন। খুব শিগগিরই নাম চূড়ান্ত করে দলের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি, আটষট্টি, ঊনসত্তর, একাত্তর এবং চব্বিশ সব গণআন্দোলন এবং ছাত্রজনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে আমরা ছাত্র রাজনীতিকে সক্রিয় করব। তিনি আরো বলেন, ছাত্রদের মধ্যে যারা ছাত্রদল কিংবা শিবির করে তারা আন্দোলনের পরে নিজস্ব সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আছে। কিন্তু এর বাইরে আরো একটা বড় অংশ রয়ে গেছে যারা জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। তারা এখন কমিউনিটি আকারে কাজ করছে ক্যাম্পাসগুলোতে। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক রূপ থাকলে তারা আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশে জাতীয় রাজনীতিতে যেসব দল আছে সেসব দলের পক্ষ থেকে সাধারণত একটি ছাত্র সংগঠনও গঠন করা হয়। সে হিসেবে ছাত্রদল পরিচিত বিএনপির ছাত্র সংগঠন হিসেবে, ছাত্রশিবির জামায়াতের এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে বলা হয় আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন। ফলে নাগরিক কমিটির নেতারা যখন নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন এবং একই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা নেতারা একটা ছাত্র সংগঠন তৈরি করছেন তখন এ দুটোর মধ্যে সম্পর্ক আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করবে কি না সে প্রশ্ন উঠছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন, তাদের সংগঠন কোনো দলের অংশ হবে না। তিনি বলেন, এটা আসলে আমাদের স্বতন্ত্র উদ্যোগ। এখানে একটা রাজনৈতিক দল হচ্ছে আবার একই সময়ে ছাত্র সংগঠন হচ্ছে এটা আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ দুটোর একটার সঙ্গে অন্যটার আসলে সম্পর্ক নেই। রিফাত রশীদ দাবি করেন, যেহেতু তারা কোনো দলের অঙ্গসংগঠন হবেন না, তাই তারা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতিও করবেন না।
কেকে/এআর