হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের অপেক্ষার যন্ত্রণা যে কতটা কষ্টকর, তা জানেন কেবল সেই মানুষগুলো, যারা বছরের পর বছর প্রিয় মুখের দেখা পান না। এমনই এক গল্প আশিকুর রহমান জামালের। যিনি ৩৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তার মাকে খুঁজে পেয়েছেন ফেসবুকের মাধ্যম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর গ্রামের মো. আক্কাস মিয়ার স্ত্রী ঝরনা বেগম নিখোঁজ হন ১৯৮৮ সালে। মাত্র তিন বছরের ছোট্ট ছেলে আশিকুর রহমান জামালকে রেখে অজানা এক ভবিষ্যতের দিকে চলে যান তিনি। আত্মীয়-স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি।
পরবর্তী সময়ে জানা যায়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কারা এই ঘটনার পেছনে ছিল, তা জানা যায়নি। সেই ছোট্ট ছেলেটি আজ ৪০ বছর বয়সী একজন সাংবাদিক, যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তার মাকে খুঁজছেন। পাকিস্তান থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে তিনি যোগাযোগ করতেন, আশা করতেন কোনো সূত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেছে, কোনো খোঁজ মেলেনি।
আলো আসলো ফেসবুক থেকে
অবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘দেশ ফেরা’ গ্রুপে পোস্ট দেখেন আশিকুর রহমান জামালের এক খালাতো বোন। পোস্টে এক নারীর আকুতি— তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান, তার সন্তান ও পরিবারের কাছে যেতে চান। ভিডিওটি আশিককে দেখানো হলে তিনি নিশ্চিত হন, এটাই তার মা। এরপর যোগাযোগ শুরু হয় এবং একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে (গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি) মায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এশিয়ান টিভির (ব্রাহ্মণবাড়িয়া দক্ষিণ) স্থানীয় প্রতিনিধি আশিক ও তার পরিবার।
৩৬ বছরের অপেক্ষার পর পুনর্মিলন
৩৬ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি আশিক। তার ভাষায়— “মাকে খুঁজে পেয়ে মনে হচ্ছে আমি নতুন একটা পৃথিবী ফিরে পেয়েছি। জন্মের পর থেকেই আমি এতিমের মতো বড় হয়েছি। আজ সেই শূন্যতা পূরণ হলো।”
তবে দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার ফলে ঝরনা বেগম বাংলা ভুলে গেছেন, তিনি এখন হিন্দি ও উর্দুতে কথা বলেন। অন্যদিকে আশিক বাংলা ও ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ, তবে হিন্দি-উর্দু তেমন বোঝেন না। ফলে ভাষার ব্যবধান সাময়িকভাবে বাধা সৃষ্টি করলেও আবেগের বাঁধ ভাঙতে পারেনি। আশিকের ছেলে হিমেল ও অন্যরা অনুবাদের মাধ্যমে মা-ছেলের কথোপকথন সহজ করে তুলেছেন।
দেশে ফিরতে চান ঝরনা বেগম
ঝরনা বেগম বা বর্তমানে জরিনা বেগম নামেই পরিচিত এই নারী এখন বাংলাদেশে ফিরতে চান। তার স্বজনরা এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আশিক বলেন, আমার হারানো মা-কে স্বশরীরে দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে আছি।কখন মা-কে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবো।
কেকে/এজে