গত বছরের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন নিজেদের ভূমিকা বড় করে দেখাতে চাইছেন। বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা দাবি করছেন, শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের আন্দোলনে তারা ‘প্রধান অংশীদার’ ছিলেন।
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শিবিরের নেতাকর্মীরা অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের মতোই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। শিবিরের কিছু সাবেক ও বর্তমান নেতা দাবি করছেন, আন্দোলনের সংগঠকদের তারা আশ্রয় দিয়েছেন, দেশি-বিদেশি যোগাযোগ সমন্বয় করেছেন এবং কর্মীদের মাঠে সংগঠিত করেছেন। এই দাবির জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলছেন, মূল পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব তাদের হাতেই ছিল, শিবির শুধু প্রচারের কাজ করেছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম সময়ন্বয়ক এবং বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কড়া ভাষায় এর সমালোচনা করেছেন, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা বরদাশত্ করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করবেন না। এই প্রজন্মের রক্তের অর্জন জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে মিথ্যাচার টলারেট (সহ্য) করব না। সবকিছু নিয়ে চুপ থাকলেও এটা নিয়ে চুপ থাকা যায় না। ইতিহাস দখলের নোংরা খেলা বন্ধ করুন।’
অন্যদিকে এ তর্ক-বিতর্কের মধ্যে শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সত্য ইতিহাস জানা জরুরি। তবে যারা ক্রেডিট ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন, তৃতীয় পক্ষকে সুযোগ করে দিচ্ছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আপনাদের ক্ষমা করবে না।’ এ ছাড়া আন্দোলনের সময় শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী মো. আবু সাদিক কায়েম লিখেছেন, ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দিকে ফোকাস না দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার জন্য যে বাদানুবাদ হচ্ছে, তা শহিদদের সঙ্গে তামাশা করার শামিল।’
গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্বের এ তর্ক-বিতর্ক নিয়ে কথা বলছেন দেশের প্রথম সারির নেতারাও। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিতে বিভিন্ন মহলে এখন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেছেন, ‘এই লড়াই ছিল জনগণের জন্য এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত জয়। তাই, এটি এককভাবে কারো কাঁধে নেওয়ার কোনো অধিকার নেই।’ গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টির আয়োজিত কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান হান্নান আহমেদ খান বাবলুর স্মরণসভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি আরো বলেন, ‘আজ যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা সবার সংগ্রামের ফল। আর এখন যদি কেউ এককভাবে এ বিজয়ের দাবিদার হওয়ার চেষ্টা করেন, তবে তাদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, যারা খুন, গুম বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের সবার এই জয়কে ভাগ করে নিতে হবে। এই বিজয় সবার, সবারই অংশগ্রহণ রয়েছে এখানে। ছাত্র, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ সবাই এ আন্দোলনে অবদান রেখেছেন।’
এর আগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ক্রেডিট কোনো দলের নয়, এর ক্রেডিট শুধু ছাত্র-জনতার। ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন মেধাবী সেনা অফিসারের ত্যাগ দিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ৫ আগস্ট হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছে।’ ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে যে সাময়িক পরিবর্তন এসেছে, তাকে স্থায়ী রূপ দিতে সৎ লোকের শাসন ও আল্লাহর আইন প্রয়োজন। যেখানে দল-মতের ঊর্ধ্বে সব নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। আমরা কাজের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রকৃত ভালোবাসা অর্জন করতে চাই।’
কেকে/এআর