ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই থেকে ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন দলটির প্রধান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ নেতারাও পলাতাক। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। কার্যত ক্ষমতা হারিয়ে ছন্নছাড়া ও গণবিচ্ছিন্ন দেশের প্রাচীন এ রাজনৈতিক দলটি। এর মধ্যেও ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা। আর এক্ষেত্রে তাদের প্রধান ভরসা ভারত। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগকে ফের বাংলাদেশের ক্ষমতায় আনতে ভারত ভূমিকা রাখবে।
১৫ বছরের টানা স্বৈরাচারী শাসন ও অভ্যুত্থানের সময় ব্যাপক দমনপীড়নের কারণে এ মুহূর্তে জনপ্রিয়তার তলানিতে আওয়ামী লীগ। দিনে দিনে দলটির নিবন্ধন বাতিল বা নিষিদ্ধ করার দাবিও জোরালো হচ্ছে। এর মধ্যে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, ভারত ‘কিছু একটা ভূমিকা’ রাখবে, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
দলটির য্গ্মু সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বৃহৎ গণতান্ত্রিক এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত কী অবস্থান নেবে সেটার গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও আদর্শিক কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ নয়। গণতান্ত্রিক চেতনায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে অবশ্যই ভারত এখানে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলেন, রাজনীতিতে ফেরার ক্ষেত্রে ভারতের সাহায্যের বিষয়টি আওয়ামী লীগ পুরোদমে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, একদম যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা বিভিন্ন টকশো বা আলোচনায় আমরা দেখতে পাই যে, তারা আশা করছে ভারত আবার তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে সাহায্য করবে ফিরে আসার ক্ষেত্রে। এটা তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্যে খুব স্পষ্ট।
ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, আমার মনে হয় না কোনো সার্বভৌম দেশ কোনোভাবে যতই সে পারস্পারিকভাবে ঘনিষ্ঠ হোক অন্য কাউকে আউটসোর্স করে দেবে। যেটা একটা ধারণার কথা উঠেছিল মাঝখানে। আমরা আশা করছি ইলেকশন হবে, জিনিসটা আবার স্থিতিশীল হবে এবং নরম্যালসি চলে আসবে। বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার যেই আসুক তার সঙ্গে ভারত কাজ করবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে সেখানে তাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আলোচনা-বক্তব্য-মন্তব্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে একটা প্রত্যাশা লক্ষ করা যায়। শেখ হাসিনার পাশাপাশি দলটির বহু নেতা পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারত যে ভূমিকা নিয়েছে এরপর তারা একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, বিশেষ করে সনাতন বা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মন্দিরে যেসব হামলা হয়েছে সেটি ভারত ভালো চোখে দেখছে না এবং ভারত তাদের স্বার্থেই এ পরিস্থিতিতে কিছু একটা উদ্যোগ নেবে বলে আভাস পেয়েছেন।
বিশেষ করে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির সাক্ষাতের পর বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা মনে করেন, ভারত এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত অবশ্যই কিছু একটা করবে। আমার তো মনে হয় ভারত ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোবে মনে হচ্ছে।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল ভিসাও ছয় মাসে খুব নগণ্যসংখ্যক দেওয়া হয়েছে।
কেকে/এআর