দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) ভরা বোরো মৌসুমে এবারও পানি দিচ্ছে না, এতে মহা সংকটে পড়েছেন কুষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী ৪ জেলার লাখ লাখ চাষী।
জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা সব খালে পানি আসার কথা ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে এসেও পানির দেখা মেলেনি। এরই মধ্যে বোরো ধান, গম, সরিষা, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে গত ১৫ অক্টোবর থেকে। চলছে ধান রোপণ কার্যক্রম।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জিকে সেচ খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে খরচ হয় বিঘা প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা। অন্যদিকে ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে চাষাবাদে খরচ ১০-১২ হাজার টাকা। বিপুল খরচের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় বহু গুণে, যার কারণে বহু জমি অনাবাদী থেকে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায় খরা প্রবণ এলাকা হওয়ায় কুষ্টিয়া অঞ্চলে ষাটের দশকে ভেড়ামারার মসলেমপুরে পদ্মা নদীতীরবর্তী এলাকায় দেশের বৃহত্তম পাম্প স্টেশন গড়ে তোলা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলা দিয়ে প্রধান খাল খনন করা হয়। ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খালের পাশাপাশি ৪৬৭ কিলোমিটার সেকেন্ডারি খাল আছে। এ ছাড়া টারশিয়ারি খাল আছে ৯৯৫ কিলোমিটার। তবে এসব খালে এখন ভরা মৌসুমেও পানি শূন্য। পানি না থাকায় খাঁ খাঁ করছে জিকে খাল। এসব খালের বড় অংশ দখল হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়াসহ ৪ জেলার ১৩ উপজেলার (১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমি) বোরো আবাদ।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জিকের প্রধান পাম্প স্টেশনে তিনটি বড় পাম্প আছে, তবে দুটি পাম্প এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট। একটি পাম্প সচল থাকলেও সেটি চালানোর জন্য পদ্মায় পানির লেভেল কম পক্ষে ৪.২ মিটার প্রয়োজন। এর কম হলে পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং পানির লেভেল কম থাকায় একটি পাম্প সচল থাকলেও সেটি দিয়েও পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে একসময় ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হলেও ভারতের ফারাক্কা বাঁধের ফলে বর্তমানে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। তাও বিভাজন করে দিতে হয়। একটি জেলা পেলে আরেক জেলার কৃষকরা পান না।
কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে ধান রোপণের আগে জানতে পারি, জিকে খালে পানি আসবে না। তখন বিকল্প উপায় না থাকায় অনেক জমি অনাবাদী রাখেন কৃষক। এবারও পানি পাব না বলে জানতে পেরেছি। তাই ধানের বদলে পেঁয়াজ ও ভুট্টা আবাদ করেছি, যাতে পানি কম লাগে।’
সদর উপজেলার উজানগ্রামের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, ‘গত বছরও জিকে খাল থেকে পানি পাইনি। এবার ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ আছে। যতটুকু বুঝতে পারছি, এ বছরও আসবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাইনি, এবারও হয়তো হবে না। ডিজেল ইঞ্জিনের মাধ্যমে যে পানি পাওয়া যায়, তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।’
সম্প্রতি জিকে প্রকল্পের আধুনিকায়নে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হলেও সেটি আলোর মুখে দেখেনি। প্রকল্পটি পাস হয়ে নতুন পাম্প স্থাপন করা হলে পদ্মার পানি ৩ সেন্টিমিটারের নিচে নামলেও পানি সরবরাহ সচল থাকবে। সেক্ষেত্রে জিকের সেচ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (বাপাউবো) প্রধান জিকে পাম্প হাউস এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমার পানি সরবরাহের জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি, ১টা পাম্প চালু থাকলেও নদীতে ড্রেজিং চলমান থাকায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ২৫ ফেব্রুয়ারি ড্রেজিং শেষ হবে, আশা করি ২৫ তারিখের পরই পানি সরবরাহ করতে পারবো। তিনি বলেন, এখন পানির লেভেল ৫ মিটার আছে, ৪.২ মিটার থাকলে পানি সরবরাহ করা যায়।
কেকে/এআর