# ২০৯ জনের নামে তালিকা প্রকাশ বনবিভাগের
# পরিবেশ অধিদফতর বলছে তালিকা শুদ্ধ নয়
# পরিবেশ অধিদফতর চিঠি দিয়েছে বনবিভাগকে
# বনবিভাগ জানেন না চিঠির খবর
সরকারি পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ ২০৯ জন পাহাড় খেকো ও বালি উত্তোলনকারীদের তাালিকা পাঠিয়েছে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরকে।
গত ১৪ জানুয়ারি ২২.০১.২২০০.৭৯০.০৮.১০.২৫ স্মারকমূলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের স্বাক্ষরকৃত এই তালিকা পরিবেশ অধিদফতরকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। একমাস পার হলেও পাহাড় খেকো ও বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে নানা প্রশ্নের উঁকি দিচ্ছে। ২০৯ জনের পাহাড় খেকো ও বালি উত্তোলনকারীদের নাম দেখা গেছে বেশিরভাগ কক্সবাজার সদর ও উখিয়া উপজেলার।
বনবিভাগ বলছে, সামগ্রিক যাচাই-বাচাই করে পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলনকারীদের তালিকা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, পাহাড়খেকোরা দলে বেশ তাদের চিহ্নিত করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। যারা বালি তুলছে বা পাহাড় কাটছে তারা অনেকেই অন্তরালে থেকে কাজ করে। তাদের খুজে আমরা একটি তালিকা তৈরি করে পরিবেশ অধিদফতরকে পাঠিয়েছি। আশা করছি তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে পাহাড়কাটা, বনাঞ্চল উজাড়, নদী-খাল ভরাট, ইসি এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ন, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ধ্বংস, দখল ও দূষণে ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন কক্সবাজারসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। নানাবিধ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে প্রকৃতি নিচ্ছে কঠোর প্রতিশোধ। বিগত দিনে বেড়েছে, ঝড়-ঝঞ্জা, বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, ভূমিধস, ভূমিকম্প, বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে বিচরণ বিশেষ করে হাতির আক্রমণে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা এবং হাতি মারা যাচ্ছে। ভাঙছে উপকূল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কলাতলী হোটেল-মোটেল এলাকার পাশ দিয়ে চলে গেছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলে চোখে পড়বে উঁচু পাহাড়ের ঢাল। ওই পথ ধরে যতদূর এগোনো যাবে, শুধু পাহাড়ের ধ্বংসস্তুপ আর হরেক রকম নির্মীয়মান স্থাপনা। শুধু কক্সবাজার সদর নয়, জেলার রামু, মহেশখালী উখিয়া, ঈদগাও , চকরিয়া, পেকুয়া থেকে শুরু করে পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব পাহাড় খেকোরা পরিবেশ ধ্বংস করে টাকার কুমির বনে সেই টাকা দিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপ পরিচালক জমির উদ্দিন জানান, যে তালিকাটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে আমরা এটি বনবিভাগকে চিঠি প্রেরণ করেছি সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য।
তবে পরিবেশ অধিদফতরের চিঠির ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম।
বাংলাদেশপরিবেশ আন্দোলন বাপা কক্সবাজার অঞ্চল সভাপতি এইচ এম এরশাদ জানান, পাহাড় কাটা হচ্ছে, বালি উত্তোলন হচ্ছে এগুলো দিনের মতো পরিস্কার। প্রশাসনের আন্তরিকতা না থাকার কারণে পরিবেশ আজ ধ্বংসের দিকে। পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগ যৌথভাবে যদি জেলা প্রশাসনের সাথে কাজ করে তবে পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলন কমতে পারে।
এদিকে সরকারি সংস্থা বন বিভাগের হিসাবে কক্সবাজারের ২ লাখ ৬০ হাজার একর বনভূমির মধ্যে প্রায় ৫৬ হাজার একর বেদখল হয়ে আছে আর সেসব পাহাড়ে বেপরোয়া হয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। সেখানে ৭০ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও ৬৯৬টি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে সেখানকার জীববৈচিত্রসমৃদ্ধ বন ও পাহাড়কেটে দখল করে আছে এমনটা নজরে এসেছে। প্রায় প্রতিদিন এসব বনভূমির গাছ আর পাহাড় কেটে সেখানে নিত্য নতুন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে এবং কক্সবাজারের বাকখালি নদী থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর জনবল সংকটের অজুহাত দিয়ে তেমন অভিযান পরিচালনা করছে না বলে জানা গেছে। তবে সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টার কঠিন হুশিয়ারির কারণে অনকেটা নড়েচড়ে বসেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে বলে জানা গেছে। তবে বনবিভাগ যে তালিকা প্রেরণ করেছে তা নিয়ে এখনো কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে জানা যায়।
কক্সবাজারে কারা কীভাবে বন ধ্বংস করছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) যৌথভাবে কক্সবাজারের বনভূমি ও পাহাড় কাটা ধ্বংস হওয়া নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছে। তাতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলায় অনেকাংশে রেল লাইনের নামে অনেক পাহাড় ধ্বংসে রয়েছে খোদ সরকারি সংস্থাগুলো।
এদিকে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা গেলে দেখা যায়, চারজন পাহাড় কাটা শ্রমিক। তাদের মধ্যে তিনজন পালিয়ে গেলেও মিজান (২৭) নামের একজন রোহিঙ্গা শ্রমিক বলেন, কেউ একজন তাদের মাটি কাটার জন্য এখানে নিয়োগ দিয়েছেন। ঐ ব্যক্তির নাম তারা জানেন না। সকাল সাতটা থেকে বেলা চারটা পর্যন্ত পাহাড় কাটার বিপরীতে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। চার দিন ধরে পাহাড় কাটলেও কেউ তাদের নিষেধ করতে আসেনি।
হলদিয়া পালং ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল, উত্তর বড় বিল, দক্ষিণ বড় বিল, সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহে গেলে দেখা যায় বনবিভাগের পাহাড় ধসিয়ে উঁচু উচুঁ বালির পাহাড় করে রেখেছে পাহাড় খেকোরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বালির পাহাড় করে রেখেছে উখিয়ার আরমান নামের এক পাহাড় খেকো, জানা যায় সে উখিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। বেশ কিছু পাহাড় ধসিয়ে কোটি টাকার বালির পাহাড় করে রেখেছেন এই আরমান। হিজলিয়ার হরিণ মারা গিয়ে ছোট থেকে শুরু করে বৃদ্ধের মুখেও পাহাড় খেকোর পরিচয়ে আরমানের নাম শোনা যায়। তার পাশাপাশি হরিণ মারার এলাকায় সোনার পাড়ার মুনাফ মার্কেট এলাকার আবুল কালাম পাহাড় কাটার নায়ক হিসেবেও কাজ করছে বলে জানান স্থানীয় তারেক নামের এক ব্যক্তি।
কেকে/এজে