শীতের কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিতেই আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে সূর্যমুখী। ফুলের হলদু পাঁপড়িগুলো বাতাসে দোল খেয়ে খেয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগে। এমনই এক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের দেখা মিলেছে নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীতে জেগে উঠা চরে।
এ বছর উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের শমসের আলী সরকারের ছেলে মোশারফ হোসেন পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছেন সুর্যমুখী। এতে তিনি যেমন স্বল্প খরচে ভালো লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখচ্ছেন তেমনি মানুষ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে যাচ্ছে বিস্তৃত চরাঞ্চলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মহারাজপুর পদ্মার চরে ভাঙাব্রীজ এলাকায় এক বিঘা জমিতে প্রতিটি গাছে ফুটেছে সূর্যমুখী। দুপুরের পর থেকেই দূর-দুরান্ত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনায় সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ছবি ও সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এতে দিনে দিনে বাড়ছে দর্শনার্থী সংখ্যাও।
এ সময় কথা হয় প্রকৃতিপ্রেমী সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফেসবুকে সূর্যমুখী বাগান দেখে লালপুর সদর থেকে চরের মধ্যে দেখতে এসেছি। এই ফুলের চাষ সদাচার দেখা যায় না, প্রথমবার দেখলাম। সবুজের সমারহে হাজার হাজার সূর্যের অপরূপ হাসির প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
তুষার ইমরান নামে আরেকজন বলেন, সূর্যমুখী বাগানে ভালো সময় কাটলো। বাগানে প্রবেশ করলেই মনে হবে হলুদের আভায় চারিদিকেই যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা।
এ বিষয়ে কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, পদ্মার চরে বালু মাটির জমিতে ভুট্টার পাশাপাশি এ বছর বছর পরীক্ষামূলকভাবে কৃষি অফিস থেকে বীজ নিয়ে ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। স্বল্প খরচে ভালো ফলন হওয়ায় আগামী বছর আরো ৫/৬ বিঘা জমিতে আবাদ করার পরিকল্পনা করেছি।
এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন বাগান দেখতে আসছে। ছবি তুলে তারাও খুশি হয় আমাদেরও ভালো লাগে।
এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, বীজ সংরক্ষণ ও তেল উৎপাদনে সহায়তাসহ চরাঞ্চলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের ফসল এবারই প্রথম লালপুর উপজেলায় তিন বিঘা জমিতে আবাদ হয়েছে। মাত্র আড়াই মাসে ফলন ও স্বল্প খরচে অধিক ফলনে কৃষকদের মাঝে এখন আশার আলো দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের সংকট নিরসনে কৃষি বিভাগ থেকে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং এবারই প্রথম উপজেলায় তিনজন কৃষককে পরিক্ষামূলক সূর্যমুখী চাষের জন্য বীজ দেওয়া হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে পদ্মার চরাঞ্চলসহ উপজেলাজুড়ে সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণ হবে বলে আশা করছি।
কেকে/এএম