মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরি ও শিশু উদ্যান অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সচেতন নাগরিক সমাজ শ্রীমঙ্গল এর আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শহরের জয়নগরস্থ উদ্যানের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ভৈরবগঞ্জ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফুয়াদ ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শ্রীমঙ্গলের প্রতিনিধি মোজাহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী হোসাইন আহমদ আফজল, সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান চৌধুরী তুহিন, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাকেক সহসভাপতি কাওছার ইকবাল, ইসমাইল মাহমুদ, গণমাধ্যমকর্মী আহমেদ ফারুক মিল্লাদ, স্টুডেন্ট এলায়েন্স শ্রীমঙ্গল এর প্রতিনিধি ফারজানা নাজনীন নিশি, ছড়াকার জাবেদ ভুইয়া, আবৃত্তিকার বিকাশ দাশ বাপ্পন,নৃত্যশিল্পী দ্বীপ দত্ত আকাশ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, শ্রীমঙ্গল পাবলিক লাইব্রেরি ও শিশু উদ্যান উপজেলার ঐতিহ্য। ২০০৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক পৌরসভার লাইব্রেরিকে অডিটোরিয়াম কাম লাইব্রেরি নামকরণ করে উদ্বোধন করেন। এসময় এ লাইব্রেরিতে ছয় হাজারের অধিক বই ছিল। ছিলেন প্রচুর পাঠকও। কিন্তু পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ ২০১২ সালে উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুস শহীদ কলেজ প্রতিষ্ঠার নামে এ লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম দখল করে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম চালান। পরবর্তীতে আবার ক্লাসের নাম করে শিশু উদ্যান মাঠে লম্বা একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। পরে এই স্থান থেকে কলেজ সাতগাঁও সরানো হলেও পাবলিক লাইব্রেরির হাজার হাজার বইয়ের খোঁজ মিলেনি। এখন পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়ামকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেনি।
এছাড়া দীর্ঘ ৪০ বছরেও শিশু উদ্যানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখনও অযত্ন-অবহেলায় এবং ভূমিখেকোদের কুনজরে পড়ে আছে এ জমিটি। ছাত্রজনতার গণঅভুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও শিশু উদ্যান ও পাবলিক লাইব্রেরি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে দখলমুক্ত হয়নি। এখনও উদ্যান-লাইব্রেরির একাংশ দখল করে পল হ্যারিস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কেজি স্কুল শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছে।
শেখ রাসেল শিশু উদ্যান নামকরণ ও সরকারি জমিতে কেজি স্কুলের ক্লাস করানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ক্ষমতার প্রভাবে আব্দুস শহীদ শ্রীমঙ্গল শিশু উদ্যানের নাম পরিবর্তন করেছেন। আমরা এটার প্রতিষ্ঠাকালীন নামে শ্রীমঙ্গল শিশু উদ্যান নামকরণ দেখতে চাই। এছাড়া সরকারি জমিতে কোন আইনে বেসরকারি মালিকাধীন স্কুলের ক্লাস হচ্ছে সেটা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন তারা।
মানববন্ধন থেকে পাবলিক লাইব্রেরি ও শিশু উদ্যানকে ৪৮ ঘন্টার ভেতরে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা গেটের পুরোনো নাম ফলকের উপরে শ্রীমঙ্গল শিশু উদ্যান সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এরপর তাদের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা দেন।
অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কয়েক কয়েক শ’ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক সমাজের এ দাবির সঙ্গে শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী এবং পথচারীরাও একাত্মতা জানান।
কেকে/ এমএস