বর্তমানে দেশে বাজছে নির্বাচনি দামামা। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোও প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিপক্ষে মত দিয়েছে। কিন্তু জামায়াতসহ কয়েকটি দল চায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হোক। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হলে পতিত আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে নির্বাচনকে উপলক্ষ করে দেশে অস্থিরতা তৈরি করবে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এতে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে’। দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে দিতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার চেষ্টা করা হলে এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। স্থানীয় নির্বাচন আগে করলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গর্তের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে। তারা পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস করবে, দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। গত মঙ্গলবার যশোর শহরের টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
এদিকে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে মাঠে আনতে স্থানীয় নির্বাচন ঘিরে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে তাদের অনেকে ভারত কী ভূমিকা নিচ্ছে, সেই অপেক্ষায় আছেন। অনেকের বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা, ভারত কিছু একটা ভূমিকা রাখবে যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে সেখানে তাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আলোচনা-বক্তব্য-মন্তব্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে একটা প্রত্যাশা লক্ষ্য করা যায়।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। দলটির বহু নেতা পালিয়ে বা তাদের ভাষায় ‘আত্মগোপন করে’ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন।
বিএনপি সূত্রের ভাষ্য, সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচনে জোর দেওয়া, প্রশাসক নিয়োগ করা ছাত্রনেতৃত্বের রাজনৈতিক দল গঠনকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার লক্ষণ। সরকারি সুবিধার আশায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকার সমর্থিত নতুন রাজনৈতিক দলে ভিড়তে পারেন। একইসঙ্গে এতে পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হবে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে পারে। দলটির নেতাদের মত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল হওয়ায় নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার আশঙ্কায়ও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের বিরোধী বিএনপি।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, জনদুর্ভোগ নিরসনের জন্য স্থানীয় নির্বাচন আগে দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন হলেই জনগণের এ দুর্ভোগ কাটবে। এরপর অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনও দিতে হবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণ কিছু মৌলিক সংস্কার চায়। গতকাল শনিবার চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বিশ্ব রোডে জেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভার শফিকুর রহমান এ কথাগুলো বলেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গত মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের কার্য অধিবেশনে বলেন,
যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত এবং বিভিন্ন সময়ে, বিগত ফ্যাসিবাদের সময়ে জনগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন, তাদের অধিকাংশই এখন পলাতক অবস্থায় আছেন। গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে বিধায় তারা পলাতক অথবা কারাগারে রয়েছেন।
ইতোমধ্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগ করেছেন, কিন্তু কোনো প্রকার অন্যায় এবং গণহত্যা কিংবা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন, তারা ক্ষমা চেয়ে আবার মূল ধারায় (মেইনস্ট্রিম) স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন এবং সেই জায়গা থেকে যদি কেউ নির্বাচন করেন, তাতেও কোনো বাধা নেই। কিন্তু কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন, এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তো কোনোভাবেই নির্বাচনে আসতে পারবেন না।’
বিএনপি নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বললেও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
কেকে/এআর