বৃদ্ধা আনোয়ারা খাতুনের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, একটি ঘরের কোণে খাটের এক পাশে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন এ বয়োবৃদ্ধা নারী। পাশেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামীর নিথর দেহ। দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে এভাবেই বিছানায় পড়ে আছেন।
কাছে যেতেই উঠে দাঁড়ালেন বৃদ্ধা আনোয়ারা খাতুন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। মনে হলো যেন আচমকা মাটি থেকে আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠছে এক মায়ের আর্তনাদে। মেয়ের জামাইয়ের প্রতারণার শিকার হয়ে অর্ধকোটি টাকার জমি হারিয়েছেন। সেই শোকে এখন তিনি পাগলপ্রায়। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জয়পুর নামক গ্রামে।
তিনি বলতে শুরু করলেন, আমার সহজ সরল একটা মাত্র ছেলে ও ছয় মেয়ের মা আমি। দীর্ঘ আঠারো মাস ধরে অসুস্থ স্বামীর সেবা করে যাচ্ছি। আমি নিজেও অসুস্থ্য। এই অবস্থায় আমার কাছ থেকে প্রতারণা করে আমার মেয়ের (জয়তুন্নেছার) জামাই সোহাগ মিয়া বাড়ির সামনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশে জয়পুর মৌজায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার জমি লিখে নিয়েছে।
জমিটি আমার স্বামীর নামে ছিল। ছলনার ফাঁদে ফেলে জমিটি প্রথমে আমার নামে পরে আমার মেয়ে জয়তুন্নেছার নামে এবং পরবর্তীতে প্রতারক জামাই সোহাগ তার নামে লিখে নেয়। আমি দুবার হজ করেছি বাবা আমি মিথ্যা বলব না। (আবার ডুকরে কেঁদে ওঠেন)।
কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নিয় আবার বলতে শুরু করেন, আমার এক ছেলে ও অন্য ৫ মেয়েকে ঠকিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সোহাগ ওই কাজ করেছে। আমার জমি আমি ফেরত চাই। যেখানে আমার স্বামীর চিকিৎসার খরচ মিটাতে পারছি না সেখানে কী করে ওই প্রতারক অর্ধকোটি টাকার জমি নিয়ে নেয়। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিভিন্নজন বাড়িতে এসে জমি দখল নেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। (আবার কান্না) আমার ঘুম নেই খাওয়া নেই, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার কিছু হলে সোহাগ এটার জন্য দায়ী থাকবে।
প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে জামাতা সোহাগ মিয়া বলেন, আমি কোনো প্রতারণা করে জমি লিখে নিইনি। তিনি স্ব-ইচ্ছায় ৮ শতক জমি তার মেয়েকে লিখে দিয়েছেন। আবার কেন জমি ফেরত চেয়ে মামলা করেছেন সেটা আমি জানি না। আমি আমার জায়গা অন্যত্র বিক্রয় করে দিয়েছি। জমির মূল্য কত এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ৫০-৬০ লাখ টাকা হবে।
কেকে/এএস