রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাম্প্রতিক যৌথবাহিনীর অভিযানের পর চুরি, ছিনতাই ও কিশোর গ্যাং-এর তৎপরতা কমে এসেছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে মোহাম্মদপুরের বসিলা চাঁদ উদ্যান ৬ নম্বর রোডে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে দুইজন অস্ত্রধারী নিহত হয়। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক ও বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
যৌথবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, আটককৃতরা দিনে একটি রাজনৈতিক নেতার ভবন নির্মাণকাজে যুক্ত থাকলেও রাতে চুরি ও ছিনতাই করত বলে স্থানীয়দের তথ্য রয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে মোহাম্মদপুরের অলিগলিতে অপরাধ প্রবণতা কমেছে এবং কিশোর গ্যাং-এর আনাগোনা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা চান, প্রশাসনের এমন কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকুক।
একজন বাসিন্দা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মোহাম্মদপুরে অপরাধ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু যৌথবাহিনীর অভিযানের পর এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান খোলা কাগজকে বলেন, বর্তমানে মোহাম্মদপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগের থেকে এখন পর্যন্ত মামলার রেকর্ড কম, পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে দিতে কাজ করছেন। তবে গতকাল অন্য এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, সেটি অনেকেই মোহাম্মদপুর বলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। আসলে ঘটনাটি ঘটেছে আদাবর থানা এলাকায়।
তিনি আরো জানান, আমরা আর এই এলাকায় অপরাধ দেখতে চাই না। যে দলেরই অপরাধী চিহ্নিত হবে একবিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, পুলিশের পাশাপাশি যৌথবাহিনীও মাঠে রয়েছে। তিনি বলেন, যে দলেরই হোক, অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ওসি তদন্ত হাফিজুর রহমান বলেন, কোনো অপরাধীকে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না। ১৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলায় রয়েছে। নিয়মিত পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে অপরাধ যেমন কমেছে মামলাও কমতে শুরু করেছে।
মোহাম্মদপুর এলাকায় সবচেয়ে ক্রাইম জোন উল্লেখিত এলাকাগুলো হচ্ছে- বসিলা, ৪০ ফিট, লাউতলা, বেড়িবাঁধ বোডগাট, চাঁদ উদ্যান, নবীগর হাউজিং, ঢাকা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং ও রায়েরবাজার।
এসব এলাকায় গত কয়েকদিন আগেও সরকারি কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজনকে কুঁপিয়ে আহত করা হয়। একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়, কিশোর গ্যাংদের আধিপত্য বিস্তার। এসব বিষয় অনেকে মামলা করলেও কেউ আবার ভয়ে থানা-পুলিশ করতে চায় না। তবে এখন পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে এসব এলাকায়।
২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনে তেমন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। স্থানীয়রা প্রশাসনের কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, যৌথবাহিনীর অভিযান চালিয়ে যেতে হবে, যেন অপরাধীরা আবার সংগঠিত হতে না পারে।
এ বিষয় এক প্রবীণ আইনজীবী খোলা কাগজকে জানান, অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ আরও কমে আসবে। তিনি বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযান অপরাধ হ্রাসে সহায়ক হয়েছে, তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্য ধরে রাখতে দ্রুত বিচার কার্যকর করা জরুরি।
কেকে/এএম