কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল কলেজগুলোতে প্রতিবছর প্রায় ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করার আগে ঝরে পড়ছে বলে ব্যুরো অব ইকোনমিক রিচার্সের গবেষণায় উঠে এসেছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালাইনাই ফ্লোরে আয়োজিত ‘টিভিইটি ইনস্টিটিউট এক্সপেন্ডেচার রিভিউ স্টাডি’ শীর্ষক একটা রাউন্ড টেবিল বৈঠকে গবেষকরা এসব বিষয়ে তুলে ধরেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, কারিগরি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করছে যাদের মধ্যে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে শতকরা ৭২ শতাংশ। বাকী প্রায় ২৮ শতাংশ গ্রাজুয়েশন শেষ করার আগে ঝরে পড়েছে।
গবেষণায় পাওয়া গেছে, পলিটেকনিক স্কুল ও কলেজগুলোতে ট্রেড ভিত্তিক শিক্ষক রয়েছে শতকরা ২৭ শতাংশ। যেখানে ৭৩ শতাংশ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ যার ৮৩ শতাংশ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। ল্যাব সহকারী পদে ২১ শতাংশ, এডমিন স্টাফ পদে ৭৭ শতাংশ, সাপোর্ট স্টাফ রয়েছে ৮৫ শতাংশ। সর্বমোট ৩৫ শতাংশ শিক্ষক কর্মচারী থাকলেও বাকী ৬৫ শতাংশ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, এসব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ঘাটতির পরও প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে প্রতিবছরে গড়ে ৩২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। যেখানে পুরোপুরি শিক্ষক-কর্মকর্তা- শিক্ষার্থীর ঘাটতি পূরণ করলে প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে ৫২ হাজার টাকা করে খরচ হবে।
এছাড়া গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ব্যয়ের টাকার মোট ৮৮.২ শতাংশ আসে সরকারি বাজেট থেকে। বাকী ৩.৮ শতাংশ ও ৮.১ শতাংশ আয় আসে সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্ট ও শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া ব্যয় থেকে।
এদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকজন শিক্ষার্থীদের পেছনে বাৎসরিকভাবে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের পেছনে ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। যার ফলে, সংশ্লিষ্টরা কারিগরি খাতের সাথে এটাকে বৈষম্য বলে মনে করছেন।
এ বিষয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সচিব কে এম কবিরুল ইসলাম বলেন, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পিছিয়ে থাকার কারণ সামাজিস স্টিগমা। কারিগরি বোর্ডে অধিকাংশ মানুষ মনে করে যারা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে চান্স পাই না তাই তারাই কারিগরি শিক্ষায় আসে।তাই, আমাদের সমাজে যে বৈষম্য তা নিরসণ করতে না পারলে কারিগরি শিক্ষায় সবসময় এরকম বৈষম্য থেকে যাবে।
ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা দেশে কারিগরি শিক্ষা প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে বলেন, কারিগরি শিক্ষা শেষ করে শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের কাজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সেদিকটা গবেষণার মাধ্যমে বের করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষার প্রতি মানুষের মধ্যকার ভুল ধারণাগুলো দূর করতে তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করা, নতুন নতুন টেকনোলজির সাথে খাপ খাইয়ে মূল ধারার কারিকুলাম আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। কারিগরি শিক্ষাকে আরও জনপ্রিয় করা মানুষের মাঝে। শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ তৈরি করা। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নতুন জায়গা তৈরি করতে হবে।
উল্লেখ্য, রাউন্ড টেবিল বৈঠকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সচিব ড. কে এম কবিরুল ইসলাম, ঢাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক সুয়াইব আহমেদ ও ব্যুরো অব ইকোনমিক রিচার্স এর চেয়ারম্যান এম এম আকাশ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/ এমএস